- ধনবাড়ীতে ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে এক বিশাল জনসভা - October 18, 2024
- ঢাঙ্গীপুকুর আদর্শ গ্রাম নূরানী মাদ্রাসার ভিত্তি প্রস্তরের শুভ উদ্বোধন - October 18, 2024
- ধনবাড়ী থানার একজন মানবিক পুলিশ ইন্সপেক্টর ইদ্রিস আলীর গল্প - October 17, 2024
এস.এম আব্দুর রাজ্জাক
জাকারিয়া রহমান জিকু। বর্তমানে কর্মরত আছেন রংপুর বিভাগে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে। কিন্তু তার এ পর্যন্ত আসার পেছনের গল্প সংগ্রামের। আর সে কথাই জানাচ্ছেন তিনি। কীভাবে সফল হলেন, তার স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখার পেছনে কার ভূমিকা বেশি এসব।ঝিনাইদহের শৈলকূপার ছেলে জিকুর ইচ্ছা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন। সেখানে পড়ার সুযোগ না হলে বাড়িতে কৃষিকাজ করবেন, আর কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন। সেজন্য এ দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনও করেননি তিনি। তবে না, শেষ পর্যন্ত তাকে কৃষিকাজ করতে হয়নি।
তার আগে এসএসসি পর্যন্ত বাবা-মায়ের কথামতো বিজ্ঞান বিভাগে পড়লেও সারাদিন পড়াশোনা হাঁসফাঁস লাগত জিকুর। সেজন্য এইচএসসিতে বিভাগ বদলে চলে যান মানবিক বিভাগে।
শেষপর্যন্ত নিজ চেষ্টা ও পরিশ্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে পড়ার সুযোগ পান জাকারিয়া রহমান জিকু। শুরু হয় এক নতুন জীবন। বন্ধু আড্ডা, গান, পড়াশোনা এভাবেই চলছিল তার। চতুর্থ বর্ষে পড়ার সময় কিছু জরুরি কাগজ সত্যায়নের প্রয়োজন পড়ে তার। চলে যান এলেনবাড়ি বিআরটিএ অফিসে। সেখানে এক সহকারী পরিচালকের রুমে যান সত্যায়নের জন্য। তবে কর্মকর্তার রুমে যাওয়া মাত্রই সেই কর্মকর্তা তাকে বলেন, ‘আমি কী আপনার কাগজ সত্যায়িত করার জন্য এখানে বসে আছি?’
সেদিনের ওই কথা শুনে খুব আঘাত পান জিকু। বের হয়ে আসেন কর্মকর্তার রুম থেকে। তবে বের হওয়ার সময় দৃঢ়স্বরে সেদিন শুধু একটি কথাই বলেছিলেন, ‘আমি আপনার চেয়ে বড় অফিসার হবো।’
এরপর শুরু হয় বিসিএসের প্রস্তুতি। শুরু করেন পড়াশোনা। ভেতরে ভেতরে জেদ কাজ করছে। প্রথম অংশ নেন ২৯তম বিসিএসে। নিয়োগ পান প্রশাসন ক্যাডারে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগ দেন নীলফামারী জেলায়। সেখানে ৭ মাস পর চাকরির পর যখন জিকু বাড়িতে যান, তখন দূর থেকে দেখতে পান বাবা একটি চায়ের দোকানে বসে আছেন। কাছে যেতেই বাবা বলে ওঠেন, ‘নাহ আমার ছেলেকে পুলিশের পোশাকেই বেশি স্মার্ট লাগবে।’
তখন ৩০তম বিসিএসের ফলাফল প্রক্রিয়াধীন। আর তার কিছুদিন পরই ফলাফল প্রকাশ হয়। দেখতে পান পুলিশ ক্যাডারে তার রোল নম্বরটি। খুশিতে আত্মহারা হয়ে যান।
জিকু বলেন, ভীষণ ভালোলাগার অনুভূতি কাজ করতো সেসময়। মনে হতো আমি আমার বাবা- মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি। সে অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।
তবে এ পেশায় এসে অন্যের অন্যায় কাজকে সমর্থন না করায় বদলি হতে হয়েছে এক জেলা থেকে অন্য জেলায়। তারপরও অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি। জীবনের ছোট-ছোট ব্যর্থতাকে নিয়েছেন শক্তি হিসেবে।
তরুণ এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ২৯তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পেয়ে প্রথম ফোনকলটি মাকেই করেছিলাম। মাকে বলি, ‘মা তোমার ছেলেতো ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে গেলো।’ একথা শুনে মা খুশিতে চিৎকার দিয়ে যেভাবে কেঁদেছিলেন সেই কান্নার আওয়াজ এখনও শুনতে পাই আমি। বাবা চলে গেছেন পৃথিবী ছেড়ে। আর তাই মাকেই জীবনের সব স্বাচ্ছন্দ্য আর সুখ দিতে চান জিকু।