ব্যস্ত ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্ত ফাঁকা: যুদ্ধ আতংক

সাইফুল ইসলাম: বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি:
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ২৬৪ জন রয়েছে বিজিবি’র হেফাজতে রয়েছে। মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সছাড়াও সঙ্গে পালিয়ে আসছেন দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্য, কাস্টমস কর্মী ও আহত সাধারণ নাগরিকরা। সর্বশেষ আজ পর্যন্ত পালিয়ে আসা ২৬৪ জন বিজিবির হেফাজতে রয়েছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, ২৬৪ জনের মধ্যে বিজিবি, সেনাসদস্য সহ অন্যান্যরাও রয়েছে।
বিজিবির অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, বিজিবির হেফাজতে ২৬৪ জনের থাকাদের মধ্যে ২২২ জন, সেনা সদস্য ২ জন, সিআইডি ৪ জন, লোকাল পুলিশ ৫ জন, স্পেশাল ব্রাঞ্চের ৯ জন, ইমিগ্রেশন বিভাগের ২০, অসামরিক ২ জন রয়েছে। আশ্রয় নেয়া বিজিবির সদস্যদের মধ্যে অনেকেই আহত রয়েছেন। তাদের বিজিবির তত্ত্বাবধানে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এ পর্যন্ত ৯ জনকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৪ জনকে সোমবার রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) মো. আশিকুর রহমান। এমন পরিস্থিতিতে ৬৫ জন রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকা প্রতিহত করলেন বিজিবি।
সীমান্ত পরিদর্শন কালে জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তার ঝুঁকি মাথায় রেখে দুটি স্কুলে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সার্বিক বিষয়ে প্রশাসন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সমন্বয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ.কে.এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, টানা ৫-৬দিন ধরে সীমান্তে মিয়ানমারের ওপারে গোলাগুলির কারণে আতঙ্কে আছে এলাকাবাসী। তুমব্রু পশ্চিমকুল পাহাড় পাড়া থেকে আশ্রয় কেন্দ্র উত্তর ঘুমধুম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় ওপার থেকে গুলি এসে আহত হন মো. সৈয়দ আলম নামের একজন। তিনি তুমব্রু পশ্চিমকুল পাহাড় পাড়া নিবাসী কাদের হোসেনের ছেলে। এছাড়া সীমান্তের ঘুমধুমের নজরুল ইসলামের বাড়ি, রহমতবিল সংলগ্ন এডভোকেট আবদুল মান্নানের বাড়ি সহ ৫ টি বাড়িতে গুলির আঘাত লেগেছে।
এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার বিকেলে ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন ও বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহিন। পরিদর্শন শেষে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জানিয়েছেন, ঘুমধুম সীমান্তের পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। সীমান্ত এলাকার ২৪০ পরিবারের লোকজন ঝুঁকি রয়েছেন। এর মধ্যে স্থানীয় চেয়ারম্যান এদের নিরাপদে সরে যেতে সহযোগিতা করছেন। ইতিমধ্যে সীমান্তবর্তী ১৫০ পরিবার নিজ উদ্যোগে নিকট স্বজনদের বাড়ি চলে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। জলপাইতলী এলাকা থেকে ৩০ পরিবারেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দুটি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। ওখানে অন্যান্যরা যেন নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। এটা প্রশাসনের পক্ষে অনুরোধ।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গুলাবারুদের শব্দে কম্পিত সীমান্তবর্তী এলাকায়। মিয়ানমার থেকে আসা গুলিতে একদিনে’ই আহত হয়েছে ৫ জন। মর্টার শেল ও গুলি এসে পড়েছে বসতঘরে। নতুনভাবে পালিয়ে আসা মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ সহ ২৬৪ জন আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিবি)’র হেফাজতে। সীমান্তবর্তী ১৮০ পরিবারকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে নিরাপদ আশ্রয়ে। এরই মধ্যে ৬৫ জন রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকা প্রতিহত করেছে বিজিবি। এদিকে নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সর্তক অবস্থায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের তুমব্রু-ঢেঁকুবনিয়া ও কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী থেকে টেকনাফের হ্নীলা পর্যন্ত এখনো শুনা যাচ্ছে মর্টার শেল আর গুলির শব্দ। মিয়ানমার থেকে ছোঁড়া গুলি, মর্টার শেল এসে পড়ছে সীমান্তে এপারে বসত ঘরে। সোমবার রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত সীমান্তের ২টি বসত ঘরে মর্টার শেল এবং আর ৫টি ঘরে গুলি এসে আঘাত হেনেছে।
এদিকে তুমব্রু এলাকার জলপাইতলীতে দুজনের মৃত্যুতে ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে এখন থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অনেকে নিজ ঘর ও গ্রাম ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্র ও আত্মীয়ের বাড়ি চলে যাচ্ছেন।
সীমান্তের ওপার থেকে ছুটে আসা বুলেট ও বোমার অংশে তাৎক্ষণিকভাবে হাত না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসক সোমবার মিয়ানমার থেকে উড়ে আসা মর্টারশেল বিস্ফোরণে নিহত হোসনে আরা বেগমের বাড়ীতে যান এবং শোকাহত পরিবারের সদস্যদের সান্তনা দিয়ে আর্থিক অনুদান প্রদান করেন। বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহিন বলেন, জেলা প্রশাসন ও বিজিবির সাথে পুলিশও সর্বোচ্চ সর্তক অবস্থায় রয়েছে।

 

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.