মিয়ানমারের ১৪ সীমান্তরক্ষী পালিয়ে এসেছে বান্দরবানে

সাইফুল ইসলাম: বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি:
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে বিদ্রোহী দল আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ১৪ সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের অস্ত্র ও গুলি বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) কাছে জমা রাখা আছে।
রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টায় দিকে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ১৪ সদস্য পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে নাইক্ষ্যংছড়িতে।
বিজিবির একটি সূত্র আজ রোববার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে। এ নিয়ে পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবে বিজিবি ৩৪ ব্যাটালিয়ন।
অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, সন্ধ্যা নাগাদ আরো মিয়ানমার সিমান্তরক্ষী নিরাপত্তার জন্যে বাংলাদেশ সীমান্ত পাড়ি দিতে পারে বলে জানা গেছে।
সূত্রটি আরো জানায়, মিয়ানমারের তুমব্রু রাইট ক্যাম্পের পরিস্থিত ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। যে লক্ষ্যে বিদ্রোহীরা গত ২২ জানুয়ারি থেকে হামলা শুরু করে ঠিক তার পরিসমাপ্তির পথে বিদ্রোহী আরকান (এএ)। আরকান (এএ) প্রতিপক্ষ আরেক বিদ্রোহী আরএসও (রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গনাইজেশন) স্বশস্ত্র গোষ্ঠিও জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ২ দিন ধরে লড়াই চলছে। তারা উভয়রবিদ্রোহী সর্বশেষ শনিবার দুপুর থেকে টানা গোলাগুলিতে ক্লান্ত করে তুলে ফেলছে সেই আলোচিত তুমব্রু রাইট ক্যাম্পে থাকা জান্তা সরকারের ৫শত সেনা কমান্ডোকে।
এ দিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের ভেতরে গতকাল শনিবার রাতে শুরু হওয়া গোলাগুলি আজ দুপুর ১২টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত চলছিল। বিরামহীন গোলাগুলির ঘটনায় ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু, কোণারপাড়া, ভাজাবনিয়া, বাইশফাঁড়ি এলাকার শত শত পরিবার যে যেদিকে পারছেন, নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন। মিয়ানমার থেকে আসা গুলিতে তুমব্রুতে একজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া বাইশফাঁড়ি সীমান্তে এক ব্যক্তির বাড়িতে গোলা এসে পড়ে আগুন ধরেছে।
নাইক্ষ্যংছড়ির কয়েকজন জনপ্রতিনিধি জানান, যে এলাকা থেকে গোলাগুলির শব্দ আসছে, সেখানে বিজিপির তুমব্রু রাইট ক্যাম্প এবং ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি অবস্থিত। এই দুটি স্থাপনা ছাড়া আশপাশের প্রায় ৪৮ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় বিজিপির বাকি সব চৌকি আরাকান আর্মি এরই মধ্যে দখলে নিয়েছে। বাকি দুটি স্থাপনা দখলে নেওয়ার উদ্দেশ্যে সেখানে আরাকান আর্মির হামলা চলছে।
তুমব্রু এলাকার একটি বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক জানিয়েছেন, সীমান্তের ওপারে বিজিপির তুমব্রু রাইট ক্যাম্পের বিপরীতে পশ্চিমপাশে তাঁদের বাড়ি। রাত তিনটার দিকে ওই ক্যাম্পে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। তখন থেকে তাঁরা পাড়ার শতাধিক পরিবার বাড়ি ছেড়ে যে যেদিকে পারেন পাহাড়ের খাদে, গর্ত তৈরি করে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছেন। সকাল সাড়ে ১০ টায়ও গোলাগুলি চলছে। একইভাবে কোণারপাড়া, ভাজাবানিয়া, বাইশফাঁড়ি এলাকার লোকজনও নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে। পুরো এলাকার মানুষ এখন আতঙ্কের মধ্যে দিনযাপন করছেন।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আনোয়ার বলেন, গতকাল বিকেলে গোলাগুলি শুরু হলেও চারটার দিকে বন্ধ হয়েছিল। আবার রাত তিনটার দিকে মুহুর্মুহু গোলাগুলি শুরু হয়ে যায়। রাতে বাইশফাঁড়ি সীমান্তে একটি গোলা এসে প্রবাসী নুরুল কবীরের বাড়িতে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় বাড়ির কেউ হতাহত হয়নি। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আগুন নিভিয়ে ফেলেন। ভোরে তুমব্রু রাইট ক্যাম্প থেকে ১৪ থেকে ১৫ জন মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য বিজিবির তুমব্রু ক্যাম্পে এসে আশ্রয় নেওয়ার কথা তিনিও শুনেছেন।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ত্রিরতন চাকমা বলেছেন, ঘুমধুম সীমান্তের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সবাই নিরাপদে আশ্রয়ে থাকলেও আতঙ্কের মধ্যে আছেন। এই বিদ্যালয়গুলো আগে থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, সীমান্তের গোলাগুলির ঘটনায় ঘুমধুম সীমান্তে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে পরিস্থিতি অনুকূলে আছে। মিয়ানমারের সঙ্গে সংযুক্ত মহাসড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সীমান্তের লোকজনকে সতর্ক ও নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্য বলা হয়েছে। সীমান্তে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি, পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনী সবাই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তিনি বলেন, মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কিছু সদস্য আশ্রয় নেওয়ার ব্যাপারে শোনা যাচ্ছে, তবে বিষয়টি নিশ্চিত করে এখনো বলা যাচ্ছে না।

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.