‘ভিক্ষার এতো টেকায় আমার কি হবি, আল্লাহর ঘরে দিলে উপকার হবি’

সম্পাদনা: এস.এম আব্দুর রাজ্জাক

এতো টেকায় কি হবি, আল্লাহর ঘরে দান করলে মাইনসের উপকার হবি। পরকালে শান্তি পাওয়া যাবি।’ এই কথা শেফালি খাতুন নামের এক নারীর। যিনি ভিক্ষা করে জীবনধারণ করেন। এলাকার মানুষ তাকে শেফালি পাগলী বলে ডাকে। অনেক দিন আগেই স্বামীর সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন। এখন সংসার চালান ভিক্ষা করে। ভালো করে হাঁটাচলাও করতে পারেন না। চলেন লাঠির ওপর ভর দিয়ে।

সেই শেফালিই ভিক্ষার জমানো চল্লিশ হাজার টাকা বাঘা পৌর এলাকার দক্ষিণ গোপারা জামে মসজিদে দান করে আলোচনায় এসেছেন। তার এই মহানুভবতায় এলাকার মানুষ আপ্লুত। তবে এখানেই থেমে থাকতে রাজি নন শেফালি খাতুন। তার ইচ্ছা পরবর্তীতে মাদরাসা ও এতিমখানায়ও টাকা দান করবেন।

শেফালি আরও বলেন, ‘প্রতিদিনের ভিক্ষার টাকায় সংসার চালানোর পর জমেছিল চল্লিশ হাজার টাকা। ওই চল্লিশ হাজার টাকা জমা দিয়েছি মসজিদ কমিটির হাতে। এবার ইচ্ছা আছে ভিক্ষার টাকা জমিয়ে দান করবো মাদরাসা ও এতিমখানায়।’ শেফালি খাতুনের বাড়ি বাঘা উপজেলার গড়গড়ি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণডাঙ্গা গ্রামে।

দক্ষিণ গাওপাড়া গ্রামের রুপচান নামের এক ব্যক্তি জানান, গ্রামের গোরস্থান জামে মসজিদের মাইক ও ফ্যান কেনার জন্য অনেক টাকা দিয়েছেন এই ভিক্ষুক।

শেফালি ভিক্ষা চাওয়ার ধরনটাও অন্যরকম। তিনি মানুষের কাছে যান, আর গিয়ে বলেন, ‘ভাই কয়েকটা টাকা দেন। নিজের খরচ করে যা বাঁচবে সেই টাকা জমিয়ে মাদরাসায় ও এতিমখানায় দিব।’

শেফালির বাড়িতে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায়, বাবার মৃত্যুর পর পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া প্রায় এক কাঠা জমিতে ঘর তুলে কোনও রকমে বসবাস করেন। তার পরেও নিজের চিন্তা না করে ভিক্ষার জমানো টাকা দিয়েছেন মসজিদে।

তার চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী রঞ্জনা জানান, ভিক্ষার উদ্দেশে বাড়ি থেকে সকালে বের হয়, ফিরে সন্ধ্যার আগে। জমি থাকলেও পাননি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দের সেই ঘর। তবে, সরকারি সুবিধা বলতে প্রতিবন্ধী ভাতা পান তিনি।

গ্রামের রেজাউল জানান, তার বাবা মসলেম প্রামাণিক ছিলেন দিনমজুর। বাবা বেঁচে থাকতে বিয়ে দিয়েছিলেন। এ বিয়ের পর তাকে স্বামীর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। তখন সে সাত মাসের অন্তঃস্বত্তা ছিল। তারপর সন্তান হওয়ার পর থেকে সেই সন্তানকে নিয়ে সংসার চালান ভিক্ষা করে।

বাঘা পৌর সভার দক্ষিণ গাওপাড়া গোরস্থান জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি সামসুজ্জোহা সরকার ও মসজিদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকা মোয়াজ্জেম রফিকুল ইসলাম জানান, দফায় দফায় সর্বমোট চল্লিশ হাজার টাকা দিয়েছেন শেফালি। সেই টাকা দিয়ে মসজিদের মাইক, ফ্যান ও টাইলস কেনা হয়েছে। তারা বলেন, মহানুভবতার প্রকৃষ্ট উদাহরণ ভিক্ষুক শেফালি।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.