- বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিহত ও আহতদের তালিকা তৈরী করুন নিহত পরিবারের সদস্যদের কর্মসংস্থান ও আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা জরুরী -ঠাকুরগাঁওয়ে মির্জা ফখরুল - September 19, 2024
- বান্দরবানে চেক প্রতারণায় পলাতক হেডম্যান মং থোয়াই ম্রয় - September 19, 2024
- যমুনা সারকারখানা চালুর দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচী - September 18, 2024
সিলেট প্রতিনিধি
তামান্না বেগম, বয়স ১৯ বছর। মূল বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ফুলদি গ্রামে। দুই মাস আগে কাপড়ের ব্যবসায়ী আল-মামুনের সাথে বিয়ে হয়েছিলো তার। কিন্তু বিয়ের দুই মাসের মাথায় লাশ হলেন নববধূ তামান্না।
স্বজনরা জানিয়েছেন, তামান্নার শরীরে আঘাতের পর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। গলায় কালো দাগ। এতেই স্পষ্ট হয় স্বামী আল-মামুনই স্ত্রী তামান্নাকে খুন করে পালিয়ে গেছে। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে আল-মামুন। তার মোবাইলফোনও বন্ধ। গতকাল বিকালে সিলেটের কোতোয়ালি থানা পুলিশ ভাড়া করা বাসা থেকে তামান্নার মরদেহ উদ্ধার করেছে।
তামান্নার মূল বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ফুলদি গ্রামে। বর্তমানে তামান্নার পরিবারের সদস্যরা সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা সদরের এমসি একাডেমির পার্শ্ববর্তী এলাকায় বসবাস করেন। তার স্বামী আল-মামুনের মূল বাড়ি বরিশাল জেলার হোগলার চরে। সে সিলেট নগরীর বারুতখানা এলাকায় বসবাস করতো। ভোটার আইডিতে তার বর্তমান ঠিকানা হিসেবে লেখা রয়েছে বারুতখানা এলাকায়। সে সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারের আল-মারজান কমপ্লেক্সের কাপড়ের ব্যবসায়ী। নিহত তামান্নার পরিবারের সদস্যরা জানান, আল-মামুনের সঙ্গে তামান্না বেগমের পূর্বের কোনো পরিচয় ছিল না। পারিবারিক ভাবে তাদের বিয়ের কথাবার্তা হয়। এবং গত ৩০শে সেপ্টেম্বর গোলাপগঞ্জের খান কমিউনিটি সেন্টারে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের আগেই নগরীর উত্তর কাজিটুলার বিহঙ্গ ৪/এ বাসার দু’তলা ভাড়া নেয় আল-মামুন। ভাড়া নেয়ার পর সে ওই বাসাতেই বিয়ের আয়োজন করে। এবং বিয়ের পর তামান্নাকে নিয়ে ওই বাসাতেই উঠে। গতকাল সোমবার সকালে তামান্না বেগম ও তার স্বামীর কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে আশেপাশের মানুষজনের সন্দেহ হয়। এ সময় তারা এসে দেখেন বাসার দরোজা বাইরে থেকে তালাবদ্ধ। দুপুরের পর তারা বিষয়টি জানান স্থানীয় কাউন্সিলর রাশেদ আহমদ সহ এলাকার মানুষকে। কাউন্সিলর পুলিশকে খবর দিলে কোতোয়ালি থানা পুলিশ এসে দরোজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে। এ সময় তারা দেখেন শয়ন কক্ষের খাটের উপর পড়ে আছে তামান্নার দেহ। স্বামী আল-মামুনের কোনো খোঁজ নেই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ স্বামীর খোঁজ করলেও পাননি। এমনকি তার মোবাইলফোনও বন্ধ। তার আত্মীয়স্বজনদেরও মোবাইলফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তামান্নার স্বজনরা লাশ দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
স্বজনরা জানান, গত ১৫ দিন আগে স্বামীর সঙ্গে তামান্নার মতবিরোধ চলছিল। কয়েক দিন আগে স্বামী আল- মামুন তামান্নাকে মারধর করেছে বলে তারা জেনেছেন। পরে বিষয়টি সমাধানও হয়ে যায়। এরপর থেকে তাদের সংসার ভালো চলছিল। তারা জানান, ঘটকের মাধ্যমে খোঁজখবর নেয়ার পর আল-মামুনের সঙ্গে তামান্নার বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের আগে তার সম্পর্কে ভালো তথ্য পেলেও বিয়ের পর তার উচ্ছৃঙ্খল আচরণ ধরা পড়ে। নববধূর ভাই সৈয়দ আনোয়ার হোসেন রাজা জানিয়েছেন, ঘটনার আগে রোববার রাত ৯টায় তামান্না বেগমের সঙ্গে সর্বশেষ কথা বলেন তার মা। তখন কথাবার্তা ছিল স্বাভাবিক। এ সময় তামান্না কোনো কিছু জানায়নি। তাদের মধ্যে কোনো বিরোধ আছে বলে অনুমান করা যায়নি। তবে আল-মামুন সিলেটের স্থানীয় বাসিন্দা না হওয়ায় তাদের বিয়েতে আত্মীয়স্বজন অনেকেরই মত ছিল না। তামান্নার মা একা সিদ্ধান্ত নিয়ে এই বিয়ে দেন। তবে, বিয়ের পর আত্মীয়স্বজনরা স্বাভাবিক ভাবেই মেনে নিয়েছিলেন। এদিকে কোতোয়ালি থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেছে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) বিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তামান্না বেগমের গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। পুলিশ স্বামী আল-মামুনের সন্ধান করছে বলে জানান তিনি। এদিকে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাশেদ আহমদ জানিয়েছেন, পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে নিয়ে গেছে। এখনো স্বামীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এলাকার মানুষকে বলে রাখা হয়েছে, স্বামী ফিরে এলে যেন খবর দেয়া হয়। স্বামী নিখোঁজ থাকার কারণে ঘটনাটি ঘিরে রহস্য দেখা দিয়েছে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.