যৌথ বাহিনীর প্রতিরাধের মুখে পিছু হাঁটল কেএনএফ: ডিআইজি নূরে আলম মিনা

সাইফুল ইসলাম: বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি
সশস্ত্র পাহাড়ি সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) হাতে অপহৃত ব্যাংকের রুমা শাখার ম্যানেজারকে মুক্ত করার পরপরই সোনালী ব্যাংকের আরেকটি শাখায় সশস্ত্র ডাকাতদল হামলা চালিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টায় শতাধিক সশস্ত্র ডাকাত সোনালী ব্যাংকের থানচি উপজেলা শাখায় হামলা চালায়।তবে তাদের হামলা প্রতিরোধ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এঘটনাকে কেন্দ্র করে বান্দরবানের থানচিতে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পুলিশ ও বিজিবির ব্যাপক গোলাগুলি চলেছে। গোলাগুলির ঘটনায় থানচি বাজার ও আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মামুন জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটা থেকে থানচি বাজার ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় কেএনএফের সঙ্গে পুলিশ ও বিজিবির ব্যাপক গোলাগুলি হয়।
ইউএনও মামুন বলেন, রাত ৯টার দিকে একদল সশস্ত্র লোক এসে থানচি বাজারে গুলি শুরু করে। পরে তারা থানায় গুলি চালায়। পুলিশ আর বিজিবিও পাল্টা গুলি করছে। হাসপাতালের পেছন দিকেও গুলি চলেছে।
থানচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসীম উদ্দীন রাত ১০টার দিকে কয়েকটি গণমাধ্যমকে বলেন, রাত সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত গোলাগুলি হয়। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
ওসি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, সন্ত্রাসীরা থানার আশপাশে রয়েছে। এ জন্য আমরা সতর্ক অবস্থায় আছি।’
পুলিশ বা প্রশাসনের কেউ কেএনএফ এর কথা না বললেও স্থানীয়রা বলছেন ‘বম পার্টি’ নামে পরিচিত সংগঠনটিই এই হামলা চালিয়েছে।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নূরে আলম মিনা বলেন, ‘রাত সাড়ে ৮টার দিকে থানচি পাহাড়ের পূর্ব ও দক্ষিণ পাশের পাহাড় থেকে থানা লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা।’
‘পরে পুলিশ থানা থেকে গুলি করে। বাজারে আমাদের টহল টিম ছিল। তারাও গুলি করেছে,’ বলেন তিনি।
ডিআইজি আরও বলেন, ‘পরে আমরা বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারাও পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে যোগ দেয়। এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে। তবে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আমরা সতর্ক অবস্থায় আছি।’
জানতে চাইলে থানচি থানার ওসি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ৫০০ রাউন্ড গুলি বিনিময় হয়েছে। রাতে আমরা এলার্ট আছি। সকাল না হলে বলা যাচ্ছে না যে গোলাগুলিতে হতাহত আছে কিনা।’
এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ৭টার দিকে র‌্যাবের মধ্যস্ততায় রুমার সোনালী ব্যাংকের অপহৃত ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে উদ্ধার করা হয়।
গত মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ৭০ থেকে ৮০ জনের একটি সশস্ত্র দল সোনালী ব্যাংকের রুমা শাখায় হামলা চালায়।
সন্ত্রাসীরা ব্যাংকের পাহারায় থাকা পুলিশ ও আনসারদের আটটি চায়নিজ রাইফেল, দুটি এসএমজি, চারটি শটগান ও ৪১৫ট রাউন্ড গুলি ছিনিয়ে নেয়।
এরপর কাছের মসজিদেই প্রবেশ করে কেএনএফের সন্ত্রাসীরা। সেখান থেকে তারাবির নামাজে থাকা ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
এরপর বুধবার দুপুরে থানচি উপজেলায় সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের দুটি শাখায় হামলা চালিয়ে ডাকাতি করে সন্ত্রাসীরা।
সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে গুলি চালাতে চালাতে ব্যাংক দুটির শাখায় প্রবেশ করে। সেখান থেকে নগদ টাকা, ব্যাংকে কর্মরতদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় তারা।
কেএনএফ সন্ত্রাসীরা নিজেদের অবস্থান জানান দিতেই এসব ঘটনা ঘটিয়েছে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এরইমধ্যে জানিয়েছেন।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.