অপরুপ সাজে ফুলতলা ও রাজকী চা বাগান

Timir Bonikতিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:

দু’টি পাতা একটি কুঁড়ির দেশখ্যাত পাহাড় টিলা জলাভূমি আর হাওরাঞ্চলে বেষ্টিত অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি পর্যটকদের আকর্ষণীয় স্থান মৌলভীবাজার জেলা। জুড়ী ২০০৪ সালের ২৬ আগস্ট দেশের ৪৭১ তম উপজেলা হিসেবে গেজেটভুক্ত হয় উপজেলায়। নবগঠিত জুড়ী উপজেলার সর্বদক্ষিণ প্রান্তে হযরত শাহ নিমাত্রা (রঃ) এর পূণ্যস্মৃতি বিজড়িত ফুলতলা ইউনিয়ন এর অবস্থান।

 

ইউনিয়নটির মোট ভৌগলিক আয়তনের একটি বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে দি নিউ সিলেট টি কোম্পানির ফুলতলা চা বাগান ও ডানকান ব্রাদার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের রাজকী চা বাগান। এখানকার যত দূর চোখ যায় কেবল সবুজ আর সবুজ, এ যেন এক অফুরন্ত সবুজের সমারোহ। সারি সারি চায়ের টিলা, আঁকাবাঁকা রোমাঞ্চকর পাহাড়ি পথ আর ঘন সবুজ অরণ্য মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে এখানে, সাথে আছে নানা প্রজাতির পাখির কলরব। সবমিলিয়ে এখানে গড়ে উঠেছে এক অপূর্ব রুপ বৈচিত্র।

 

বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলের ন্যায় এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সরকার কর্তৃক বিভিন্ন পদক্ষেপ গৃহীত ও বাস্তবায়িত হয়েছে। রাস্তাঘাট পুল কালভার্ট ব্রীজ নির্মাণের ফলে এতোঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার দূর্ভোগ লাঘব হয়েছে। লেখাপড়ায় অনগ্রসরতা দূর করতে বেশ কিছুকাল আগেই সরকারীকরণকৃত চুঙ্গাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মানোন্নয়নে নেওয়া হয়েছে কার্যকর পদক্ষেপ, রেজিষ্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সরকারিকরণ করা হয়েছে রহিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে।

 

নতুন করে স্থাপিত হয়েছে এলবিন টিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চা জনগোষ্ঠীর মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা গ্রহণের বাসনাকে বাস্তব রুপে প্রতিষ্ঠিত দানে ২০১০ সালে স্থাপিত রাজকী এলবিন টিলা মুক্তিযোদ্ধা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। বাগান দু’টি ও তাদের ডিভিশনসমূহে বসবাসকারী মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে -চা। ভোরে লাইন সর্দারের ডাকে বিভিন্ন লাইনের মা-বোনেরা ও পুরুষ শ্রমিকেরা রওয়ানা হন কোম্পানির কাজে।

 

কোম্পানির কাজ বলতে এখানে চা গাছের চারা পরিচর্যা, কীটনাশক প্রয়োগ, আগাছা নিংড়ানো, চা গাছের উপরের দিক সুনির্দিষ্ট মাপে সমানভাবে ছেটে দেওয়া ইত্যাদিকে বোঝায়। তবে চা বাগানের সবচেয়ে দর্শনীয় দৃশ্য হলো চা পাতা তোলার দৃশ্য, নির্দিষ্ট সময়ান্তে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ও তদারকিতে চলে চা পাতা তোলার কাজ। দেখতে বেশ সহজ মনে হলেও কাজটি যথেষ্টই সতর্কতা ও দক্ষতার সাথে করতে হয়।

 

যদি চায়ের স্বাদ কেউ ঠিকঠাক পেতে চায়। উত্তোলিত চা পাতা নির্দিষ্ট মাত্রায় শুকিয়ে নিয়ে উন্নত মানের মেশিনের সাহায্যে গুঁড়ো করে প্যাকেটজাত করা পর্যন্ত সে এক বিশাল কর্মযজ্ঞের প্রতিফলন। এমনই কষ্টার্জিত পারিশ্রমিকে চলে শ্রমিকের জীবন সংসার, জুটে দুমুঠো ভাত, এক খন্ড কাপড় কিংবা অবুঝ শিশুর প্রিয় কমদামি খেলনাটি। চা বাগানের কাজের ফাঁকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ধান, সবজি, পান ইত্যাদি চাষ করেন অনেকেই। হাঁস, মুরগী, গরু, ছাগল আর কবুতর পালনেও সমানভাবে আগ্রহী এখানকার বাসিন্দারা।

 

 

২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী এই ইউনিয়নের মোট জনসংখ্যা ২৯ হাজার ৬৭১ জন মানুষ বসবাস করেন । যার মধ্যে একটি বিশাল অংশ বাস করেন ফুলতলা ও রাজকী চা বাগানে। ফুলতলা চা বাগানের লোকসংখ্যা ৩৪৩৭ জন তাদের মধ্যে শ্রমিক হচ্ছেন ১২৭১ জন। তাছাড়া রাজকী চা বাগানে ৫২০০ জন এবং শ্রমিক সংখ্যা ৯৪০ জন। দেশের পর্যটন শিল্পে বিশাল একটি অংশজুড়ে আছে চা বাগান।

 

চা বাগান মানেই যেন অপার সৌন্দর্যের হাতছানি, যেন স্নিগ্ধতার পরশছোঁয়া একরাশ অবসর। যেখানে নিমেশেই জুড়িয়ে যায় চোখ, অচিরেই ভরে ওঠে মন সবুজে সবুজে ডাকা চারিদিক। যতদূর চোখ যায় সমান আকৃতির চা গাছগুলো দেখতে দেখতে যেন নেশা ধরে যায়, এইসব ভালোলাগা ভালবাসায় মুগ্ধতায় অনন্য দৃষ্টান্ত জুড়ী উপজেলা।

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.