সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে দায়িত্ব থেকে সরে যাব: ইসি আলমগীর

নির্বাচন কমিশনার আলমগীর বলেছেন, আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবো না, এটা বিশ্বাস করি না। প্রয়োজনে দায়িত্ব থেকে সরে যাবো। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে কোনো কম্প্রোমাইজ করবো না। বৃহস্পতিবার (১৬মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

 

 

যদি কম্প্রোমাইজ করতে হয় তাহলে কী করবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তখন আমাদের এই চেয়ারে দেখবেন না। আমরা যে কাজের জন্য শপথ করেছি সেটা যদি না-ই করতে পারি তাহলে এই চেয়ারে থাকবো কেন? আমাদের কমিশনে যারা আছি সকলের মনোভার এ রকমই। অবশ্যই আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবো না এটা বিশ্বাস করি না। প্রয়োজনে দায়িত্ব থেকে সরে যাবো। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে কোনো কম্প্রোমাইজ করবো না।

তিনি আরও বলেন, লেবেল প্লেয়িং ফিল্ডের বিষয়টি আমরা তফসিল ঘোষণা আগে দেখবো। আমাদের কিছু কৌশল থাকবে, যাতে সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায়। সেই কৌশলগুলো তো আমরা বলবো না। অবশ্যই কিছু কৌশল থাকবে। নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু হবে গ্যারিন্টি দিচ্ছি আমরা। আমরা যতক্ষণ আছি এই চেয়ারে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করে যাবো।

 

দলীয় সরকারের অধীনে ভোট সুষ্ঠু হবে না, এই ধারনা ভাঙ্গার দায়িত্ব কার-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা ভাঙ্গার দায়িত্ব রাজনীতিবিদদের। এখানে নির্বাচন কমিশনের কিছু করার নেই। এটা রাজনৈতিক সমস্যা। রাজনৈতিক সমস্যা, রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে। এ বিষয়টাতে আমাদের কিছু করার নেই। সংবিধানও সে দায়িত্ব আমাদের দেয়নি।

সাবেক এই ইসি সচিব বলেন,আমাদের নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে ভোট সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকা। নির্বাচনে যারা অংশ নেবেন তারা স্বাধীনভাবে প্রচার করতে পারেন, ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে এসে তাদের ইচ্ছেমত তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন, ভোট গণনা যাতে সুষ্ঠুভাবে হয়, নির্বাচনের ফলাফল যাতে সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয় ভোটারদের ইচ্ছার, সেটা আমাদের দায়িত্ব। আমরা সে দায়িত্ব পালনের প্রতি আমাদের শতভাগ অঙ্গীকার রয়েছে। আমরা সেটা করবো।

দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ ভোট করা সম্ভব কিনা?এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কমিশন চাইলে সেটা সম্ভব। পৃথিবীর সব দেশেই প্রায় দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হয়। এটা নির্ভর করে নির্বাচন কমিশন কতটা সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করে। আমরা যদি আমাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করি এবং সেটা আমাদের ইচ্ছা আছে, অবশ্যই একটা সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।অতীতে কেন পারেনি সেটা অতীতে কমিশন পারবেন। আগের কমিশন আর বর্তমান কমিশনের লোক হচ্ছে ভিন্ন। তাদের আচরণের সঙ্গে এদের আচরণ মিলবে না।

সংকট দূর করার জন্য সংলাপের দায়িত্ব কে নেবে-এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংবিধান কি সেই দায়িত্ব আমাদের দিয়েছে। আমাদের বিভিন্ন অংশীজন, সুশীল সমাজের মতামত নেওয়ার ক্ষমতা তো দেওয়া আছে। এখন আর হচ্ছে না। হয়তো পরবর্তীতে হতে পারে। সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে হতে পারে। আবার কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে হতে পারে। অর্থাৎ যাদের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি অথবা প্রয়োজন সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচনেন জন্য, তাদের সঙ্গে তো আমরা নির্বাচনের আগে হয়তো আবারও হতে পারে। সেটা তো থাকতে পারে। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা তো সব সময় আছে, যে নির্বাচন কমিশন যে কোনো সময় যে কোনো দলের সঙ্গে বসে বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে পারি।

প্রশাসনে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবেন কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গাইবান্ধা উপ-নির্বাচন তার বড় উদাহরণ। প্রশাসন যারা কাজ করেছিলেন, যাদের গাফিলতি পাওয়া গেছে বা যারা অন্যায় কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা চিঠি দিয়েছি এবং সেটা মনিটরিং করেছি। কতজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ইত্যাদি আমরা দু’এক সপ্তাহ পরপরই মরিটর করছি। প্রার্থীর সংশ্লিষ্টতা তো আমরা বলতে পারি না।যারা জড়িত ছিল তারা প্রার্থীর কথা বলে নাই। তারা কেন বললো না সেটাই তো রহস্য। তাদেরকে বারবার প্রশ্ন করা হয়েছে, তদন্ত কর্মকর্তারা বারবার প্রশ্ন করেছেন এমন কাজ করলেন কেন, তারা বলেছেন আমরা স্বেচ্ছায় করেছি। এখন তারা যদি বলেন স্বেচ্ছায় করেছি। তারা যদি কারো নাম বলতো আমরা ব্যবস্থা নিতে পারতাম।এখানে তো অনুমান, আন্দাজ ভিত্তিক কোনো অ্যাকশন নেওয়া যায় না। যে কোনো প্রশাসনিক, বিচারিক বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হলে আপনাকে যা তদন্তে প্রমাণিত হবে তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে হবে।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.