জীবন থাকতে বাংলাদেশের স্বার্থ নষ্ট হবে না: প্রধানমন্ত্রী

বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বাংলাদেশের বর্তমান মাথা পিছু আয় ২৮২৪ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন করছে তখন দেশ উন্নত মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে। তাই নিজের জীবন থাকতে বাংলাদেশের স্বার্থ নষ্ট হবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, জীবন থাকতে দেশের এতটুকু স্বার্থ নষ্ট হবে না। দেশ কারো হাতে তুলে দেব না।

শনিবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২২তম ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

১৯৯৬ সালে ভোট চুরি করে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেছিল বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ভোট চুরি করলে জনগণ ছেড়ে দেয় না। বিএনপিকেও ছাড়েনি। তাদের ক্ষমতা থেকে টেনে নামায় জনগণ। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে হাত দেয়।

২০০৮ সাল থেকে পরপর তিনবার ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে পৃথিবীর মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তব।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতায় যেতে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তৈরি করেছিল খালেদা জিয়া। বর্তমানে ভোটার আইডি স্মার্ট করা হয়েছে। ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছে আওয়ামী লীগ।

বঙ্গবন্ধুর সন্তান দুর্নীতি করে টাকা আয় করতে ক্ষমতায় আসেনি বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতি করে টাকা আয় করতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসেনি। বিএনপি ক্ষমতায় থেকে বিদ্যুতের কথা বলে খাম্বা দিয়েছিল। আর আওয়ামী লীগ বিদ্যুৎ উৎপাদন ২৫ হাজার মেগাওয়াটে নিয়ে গেছে। দেশের প্রতিটি ঘরে আলো পৌঁছে দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার।

যুদ্ধের ভয়াবহতায় নিজের স্মৃতিচারণ করে বিশ্ব নেতাদের যুদ্ধ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বে আমরা কোনো যুদ্ধ চাই না। কোনো নিষেধাজ্ঞা চাই না। যুদ্ধ মানুষের ক্ষতি করে। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা যুদ্ধে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ চলবে ই-গভর্নেন্স (ইলেকট্রনিক গভর্নেন্স) পদ্ধতিতে। এমন তথ্য জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশ আগামীতে ই-গভর্নেন্স পদ্ধতিতে চলবে। শিক্ষা ও সরকারসহ সকল কাজ হবে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে।

এ জন্য তরুণ প্রজন্মকে প্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ করতে ইতোমধ্যে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এছাড়া বর্তমানে দেশের তরুণরা ফ্রিল্যান্সিং করে ঘরে বসে আয় করছে। তাদের প্রশিক্ষণ, সনদ ও সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করেছে সরকার।

দেশের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে মানুষের চাষের কোনো জমি খালি না রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যার যেটুকু জমি আছে চাষ করুন। আমাদেরটা আমরা খাবো কারো কাছে হাত পাতবো না। মানুষের যে কোনো দুর্যোগে আওয়ামী লীগ পাশে ছিল। এখনো আছে।

এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

এর আগে সম্মেলন মঞ্চে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পাশাপাশি জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে’- এই স্লোগানে আয়োজিত হচ্ছে এবারের কাউন্সিল।

অপরদিকে প্রথম অধিবেশন শেষ হলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে শুরু হবে কাউন্সিল অধিবেশন। সেখানে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে। দলে নেতৃত্ব নির্বাচনে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।

নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান:

শনিবার সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দোয়েল চত্বর, রমনা কালীমন্দির গেট ও টিএসসি এবং চারুকলার বিপরীত গেট দিয়ে মিছিল নিয়ে সম্মেলন স্থলে ঢুকতে দেখা গেছে নেতাকর্মীদের। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সম্মেলন রূপ নেয় জনসমুদ্রে। সম্মেলন স্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কানায় কানায় পূর্ণ হয়।

আওয়ামী যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, মৎস্যজীবী লীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, তাঁতি লীগ এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সারাদেশের সাংগঠনিক জেলা থেকেও নেতাকর্মীদের ঢল নেমেছে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০ ও ২১ ডিসেম্বর। সেই সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় বারের মতো সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন, বন্ধ বি‌ভিন্ন সড়ক:

সম্মেলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশে বেশ কিছু সড়কের ১১‌টি প‌য়েন্টে বন্ধ র‌য়ে‌ছে যানবাহন চলাচল। ত‌বে এসব সড়‌কের বিকল্প হি‌সে‌বে রোড ডাইভারশন ক‌রে দি‌য়ে‌ছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা ট্রাফিক বিভাগ।

রাজধানীর কাঁটাবন ক্রসিং, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ক্রসিং, কাকরাইল ক্রসিং, কাকরাইল চার্চ ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার, ভাস্কর্য ক্রসিং, উপাচার্য ভবন ক্রসিং, ইউবিএল ক্রসিং, দোয়েল চত্বর ও জগন্নাথ হল ক্রসিং সড়ক বন্ধ র‌য়ে‌ছে।

আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী:

সকাল থে‌কে সম্মেলনস্থলে দে‌শের বিভিন্ন স্থান থে‌কে আসা নেতাকর্মী‌দের ঢল নাম‌তে শুরু ক‌রে‌। এসময় সমা‌বেশস্থল ঘি‌রে সতর্ক অবস্থানে যায় আইনশৃঙ্খলা বা‌হি‌নী।

স‌রেজ‌মি‌নে সমা‌বেশস্থ‌ল এলাকা ঘু‌রে দেখা ‌গে‌ছে, সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দোয়েল চত্বর, রমনা কালী মন্দির গেট, টিএসসি ও চারুকলার বিপরীত গেট দিয়ে মিছিল নিয়ে সম্মেলন স্থলে প্রবেশ করেন নেতাকর্মীরা। এছাড়া ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ও শিখা চিরন্তন সংলগ্ন গেট দিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও অতিথিরা প্রবেশ করেন।

এদিকে সমাবেশস্থলের আশপাশে কঠোর নজরদারিতে থাকতে দেখা গেছে পুলিশ, র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। এছাড়া বি‌ভিন্ন বিভাগ থে‌কে আসা নেতাকর্মী‌দের জন‌্য গা‌ড়ি রাখার স্থানও নির্ধারণ করে দেওয়া হ‌য়।

প্রসঙ্গত, ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে জন্ম হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের। এ দলের জন্মের পর থেকে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা অর্জনসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও অর্জনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দলটির নাম। ১৯৫৫ সালের তৃতীয় জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে সকল ধর্ম, বর্ণের প্রতিনিধি হিসেবে দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ যায়। এরপর ১৯৭১ সালে হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.