পাওনা টাকা চাওয়ায় গলাকেটে হত্যা, সিআইডির জালে তিনজন

ছয় মাস আগে মুনসুরকে ১৫ হাজার টাকা ধার দিয়েছিলেন মুনছুর আলী ফকির। কয়েকবার চেয়েও ধারের টাকা পরিশোধ করছিল না মুনসুর। ওই পাওনা টাকা আদায়ের জন্য চাপ প্রয়োগ দিলে মুনসুরের সঙ্গে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয় মুনছুর আলী ফকিরের। পরে ঘটনাটি নিয়ে কয়েকজনের সহযোগিতায় পূর্বপরিকল্পিতভাবে মুনছুরকে ডেকে নিয়ে গলা কেটে হত্যা করে শেরপুরের নকলা উপজেলার ধনাকুশা নদীরপাড়ের কাঁচা রাস্তার ওপরে ফেলে রেখে যাওয়া হয় লাশ।

বিষয়টি নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে ক্লুলেস মামলাটির ছায়া তদন্তে নামে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। শেরপুরের নকলায় ১৫ দিন সংঘটিত ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় সিআইডি।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. মুনছুর আলী, মো. আশিক মিয়া এবং মো. আমির হোসেন। গ্রেপ্তারদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে সিআইডির সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করেন সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তাধর।

সংবাদ সম্মেলনে মুক্তাধর বলেন, চলতি বছরের গত ১২ ডিসেম্বর নকলা উপজেলার ধনাকুশা নদীরপাড়ের কাঁচা রাস্তার ওপর থেকে অজ্ঞাত এক যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে জানা যায় যে, ওই যুবকের নাম মুনছুর আলী ফকির। জামালপুরের ইসলামপুর থানার কাচিহারা গ্রামের হানিফ উদ্দিনের ছেলে মুনছুর যানবাহনে বাস চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পরদিন নিহতের বাবা হানিফ উদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে নকলা থানায় একটি মামলা করেন। ঘটনাটি চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করলে সিআইডি ছায়া তদন্ত শুরু করে। সিআইডির সার্বিক দিক নির্দেশনায় এই হত্যার ঘটনাটি কেন এবং কিভাবে সংগঠিত হয়েছে, ঘটনায় কে বা কারা জড়িত, কারো সাথে পারিবারিক বা ব্যবসায়িক পূর্ব কোন বিরোধ ছিল কিনা ইত্যাদি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর নিহতের পরিবার, ঘটনাস্থল ও আশপাশ এলাকার বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে মুনসুর আলী, মো. আশিক মিয়া এবং মো. আমির হোসেন এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে জানতে পারে সিআইডি। এরপর সিআইডির এলআইসির একাধিক চৌকস দল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রপ্তারে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায়। অভিযানে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে মুক্তাধর বলেন, নিহত মুনছুর গ্রেপ্তারকৃতদের কাছে পাওনা টাকা আদায়ের জন্য চাপ দিলে তাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরে এই তিনজন মিলে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মুনছুর আলীকে ডেকে নিয়ে গলা কেটে নির্মমভাবে হত্যা করে।

গ্রেপ্তারকৃতদের কাছে নিহত মুনছুর আলী কত টাকা পেতেন এমন প্রশ্নের জবাবে মুক্তাধর বলেন, মাত্র ১৫ হাজার টাকা পেতেন। এই ১৫ হাজার টাকার কারণে এমন নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।

গ্রেপ্তার মুনসুর জামালপুরের আনারামপুর গ্রামের কালাচান মিয়ার ছেলে। আশিক মিয়া গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার অবদা গ্রামের সাইদুল ইসলামের ছেলে এবং মো. আমির হোসেন শেরপুর জেলার নকলা থানার ধনাকুশা গ্রামের মো. ওমর আলীর ছেলে।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.