ভাটারায় নারীর বস্তাবন্দি লাশ, খুনি গ্রেপ্তার

রাজধানীর ভাটারায় বস্তাবন্দি নারীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মূল খুনিকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের (ডিবি) একটি দল। গ্রেপ্তারকৃতের নাম আবদুল জব্বার। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বুধবার দুপুরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মো. মশিউর রহমান ঢাকাটাইমসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত ১০ অক্টোবর বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ভাটারা থানার ছোলমাইদ ঢালী বাড়ি এলাকায় শিপন আক্তার নামের এক নারীর বস্তাবন্দি লাশ পাওয়া যায়। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা শিপনকে হত্যার পর লাশ বস্তায় ভরে ছোলমাইদ ঢালীবাড়ী এলাকায় এভারকেয়ার হাসপাতাল রোডের পাশে ফেলে দেয়। নিহত শিপন আক্তার বগুড়া জেলার সোনাতলা থানার বামুনিয়া গ্রামের আবদুল কুদ্দুসের মেয়ে।

গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ওই ঘটনার পর থেকে ডিবি তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ও অপরাধ সংশ্লিষ্ট এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনার মাধ্যমে খুনিদেরকে শনাক্ত ও ঘটনার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করে আসছিল। ডিজিটাল মাধ্যম ও তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ভাটারা থানা পুলিশের সহায়তায় এক পর্যায়ে খুনিদের শনাক্ত করতে তারা সক্ষম হন। হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা আব্দুল জবারকে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ হতে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত আবদুল জব্বারের বরাত দিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, নিহত শিপন আক্তার একজন গার্মেন্টস কর্মী ছিলেন। তবে মাঝে-মধ্যে তিনি পরিচিত জনদের সঙ্গে টাকার বিনিময়ে সময় কাটাতেন। গত ১০ অক্টোবর মোবাইল ফোনে পরিচিত জব্বারের সাথে সময় কাটানোর জন্য বের হন শিপন। গাড়ির গ্যারেজের কর্মী জব্বার শিপন আক্তারকে নিয়ে যমুনা ফিউচার পার্ক ও ফুটপাতের ফুসকার দোকানে ঘোরাঘুরি শেষে সন্ধ্যার পরে ছোলমাইদ ঢালীবাড়ির ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। এর আগেইআবদুল জব্বার তার স্ত্রী-সন্তানকে শ্বশুরবাড়ি চাঁদপুর পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। আবদুল জব্বার তার বাসায় ওই নারীর সাথে অনৈতিক কাজ শেষে শিপন তার কাছে টাকা দাবি করেন এবং চলে যেতে চান। তখন আবদুল জব্বার শিপনকে সারারাত বললে তিনি ক্ষিপ্ত হন। তিনি আবদুল জব্বারের কর্মকাণ্ড জনসম্মুখে ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দেন এবং চিৎকার করতে থাকেন।

গোয়েন্দা পুলিশের ওই সূত্রটি জানায়, এতে আবদুল জব্বার সম্মান রক্ষার ভয়ে শিপন আক্তারকে রাত ১০টার দিকে গলা টিপে হত্যা করেন। ইয়াবা আসক্ত আবদুল জব্বার এরপর শিপন আক্তারের মোবাইল ফোনটি এক হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। ওই টাকা দিয়ে তিনটি ইয়াবা কিনে বন্ধু হীরাসহ বাসায় ফিরে আসেন। হীরার সঙ্গে ইয়াবা খাওয়া শেষে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে দুজনে লাশটিকে প্রথমে একটি কার্টুনের মধ্যে ঢুকান। পরে বড় বস্তায় ভরে রাত ৩টার দিকে আবদুল জব্বার বন্ধু হীরার সহায়তায় মাথায় করে লাশটি তিনতলা থেকে নিচে নামান। এরপর রিকশা ভাড়া করে লাশটি রাস্তায় ফেলে দেন।

গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম খুনির স্বীকারোক্তি মতে চুরি হওয়া মোবাইল, নিহতের ফেলে দেয়া বোরকা এবং স্যান্ডেলসহ হত্যাকাণ্ডের অন্যান্য আলামত উদ্ধার করেছে। আবদুল জব্বার ইতোমধ্যে আদালতে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মো. মশিউর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, মোবাইল ফোন এবং ফেসবুকের অত্যধিক ব্যবহার নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যেও ব্যাপক বিকৃত আকাঙ্ক্ষা জন্ম দেয়। নীতি-নৈতিকতা হারিয়ে পারিবারিক মূল্যবোধের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রায়ই তারা যৌনতায় অন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে কখনও আত্মহনন, কখনও নির্মম খুনের ঘটনা ঘটে যাচ্ছে।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.