টিকাদার খাইরুল কবির রানার অবহেলা, অনিয়মের কারনে কুড়িগ্রামে  গ্রামীণ জনপদের সড়ক-সেতু নির্মাণে বিলম্ব। জনদুর্ভোগ

সাইফুর রহমান শামীম , কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি।।
বন্যার তান্ডবে এখনো ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, সেতু ও কালভার্ট সংস্কার বা পুননির্মাণ হয়নি । ফলে চরম ভোগান্তিতে রয়েছে গ্রামীণ জনপদের মানুষ। বিশেষ করে স্থানীয় সরকার প্রোকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক সেতু কালভার্টের অবস্থা শোচনীয়। বছরের পর বছর যায় কিন্তু রাস্তার সংস্কার কাজ শেষ হয় না।
কার্যাদেশ হাতে পাওয়ার পরেও কাজ শুরু করতেই বছর পার করে দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। ফলে চুক্তি অনুযায়ী বেঁধে দেয়া সময়ে কাজ সম্পন্ন হওয়া তো দুরের কথা, আসন্নবর্তী বর্ষাকালে জন ভোগান্তি চরমে উঠার আশংকা সৃষ্টি হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে দেখার কেউ নেই।
সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার রংপুর গুপ্তপাড়ার মোঃ খায়রুল কবির রানার স্বেচ্ছাচারিতায় নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পের কাজ শুরু না করে জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করে কাজ,শুরু করলেও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারসহ রাস্তা তৈরীতে কাজের প্রতিটি ধাপে নেয়া হয়েছে অনিয়মের আশ্রয়। বক্স কাটিং, সেন্ড ফিলিং,সাববেজ অর্থাৎ বালু এবং খোয়ার মিশ্রণ সব স্তরেই ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের সামগ্রী।
সাববেজ এর কাজে বালু এবং খোয়ার মিশ্রণে নিম্নমানের ইটের খোয়া ব্যবহার ও প্রতিটি স্তরে ওয়াটার কিউরিং  করে কমপ্যাক্ট করার নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি। ফলে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার ও অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে শুরু করা কাজে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এ ব্যাপারে এলজিডি থেকে বার বার তাগাদা দেয়া স্বত্ত্বেও টনক নড়ছে না ঠিকাদারের। অদৃশ্য খুঁটির জোরে তিনি নিজের ইচ্ছামত কাজ করে যাচ্ছেন।কোন অদৃশ্য শক্তি বলে  তার এহেন স্বেচ্ছাচারী মনোভাব তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সচেতন মহলে।
এদিকে ইডিডিআরআইআরপি (বন্যা) প্রকল্পের আওতায় উলিপুর উপজেলাধীন থানাহাট মন্ডলেরহাট ভায়া রাণীগন্জ রাস্তার কাজ সময়ক্ষেপণ করে শুরু করলেও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় জনসাধারণ নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়ে উলিপুর এলজিইডিতে অভিযোগ করে। উপজেলা  ইঞ্জিনিয়ার  অভিযোগের ভিত্তিতে উক্ত প্রকল্প দুটির কাজ তদন্ত পূর্বক বন্ধ করে দেন। অন্যদিকে বিলুপ্ত ছিটমহল প্রকল্পের আওতায় রৌমারী উপজেলাধীন কর্তীমারী জিসি – বড়াইবাড়ী বিওপি ক্যাম্প ভায়া বাওয়াইগ্রাম রাস্তার কাজ গত অর্থ বছরে সম্পন্ন করার কথা থাকলেও কাজ শেষ  না হওয়ায় উক্ত কাজের বিল বাবদ পুরো টাকার পে-অর্ডার  অফিসে জমা রয়েছে।
স্হানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় উল্লিখিত বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের ঠিকাদার হচ্ছেন রংপুর গুপ্তপাড়ার মোঃ খায়রুল কবির রানার কয়েকটি কাজের মধ্যে (১)ভুরুঙ্গামারী উপজেলাধীন আরডিপি ২ প্রকল্পের অধীনে (ক) সোনাতলী পুকুরপাড় ভোটহাট বাজাভিয়া সোনা ব্যাপারীর ঘাট রাস্তা। (খ) ডিপেরহাট কালিরহাট ভায়া বেলদহ স্কুল এবং মাদ্রাসা রাস্তা। (২) নাগেশ্বরী  উপজেলাধীন আরডিপি ২ প্রকল্পের অধীনে কচাকাটা বাজার কলেজ মোড় ( সন্তোষ ব্রীজ),  কচাকাটা বিওপি ক্যাম্প রাস্তার ১৮৫০ মি: চেইনএজে ৮১.৩ মি: ব্রীজ।
(৩)ইডিডিআরআইআরপি (বন্যা) প্রকল্পের আওতায় উলিপুর উপজেলাধীন থানাহাট মন্ডলেরহাট ভায়া রানিগন্জ রাস্তা।
(৪)ইডিডিআরআইআরপি (বন্যা) প্রকল্পের আওতায় উলিপুর উপজেলাধীন থানাহাট মন্ডলেরহাট ভায়া রাণীগন্জ রাস্তা। (৫)বিলুপ্ত ছিটমহল প্রকল্পের আওতায় রৌমারী উপজেলাধীন কর্তীমারী জিসি – বড়াইবাড়ী বিওপি ক্যাম্প ভায়া বাওয়াইগ্রাম রাস্তা।
(৬)কচাকাটা ভায়া নায়েকের হাট ব্রীজ।
এছাড়াও ঠিকাদার খায়রুল কবির রানার নামে নেয়া এবং সাব-কন্ট্রাক্ট এ দেয়া নাগেশ্বরী পৌরসভার বালাঘাট ব্রিজ এর ক্ষেত্রেও একই অবস্থা পরিলক্ষিত হয়েছে।
কার্য্যাদেশের তারিখ থেকে দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও নাগেশ্বরী পৌরসভার বালাঘাট ব্রীজের নির্মাণ কাজ আজও শেষ হয়নি। বর্ষার আগে কাজ শেষ না হওয়ায় এবারও চরম দুর্ভোগে পড়তে যাচ্ছে ১১ গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ।
ইডিডিআরআইআরপি (বন্যা) প্রকল্পের আওতায় উলিপুর উপজেলাধীন থানাহাট মন্ডলেরহাট ভায়া রানিগন্জ ২টি গ্রুপে খায়রুল কবির রানার নামে নেয়া কাজ দুটি সাব কন্ট্রাক্টে করছেন রকি বকসি ও শহিদুর রহমান নামের স্থানীয় দুইজন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় উক্ত দুটি রাস্তার কাজে বালু ফিলিং,খোয়া- বালু মিশ্রিত এজ, খোয়া দিয়ে ডাব্লিউ বিএম করা হয়েছে।পানি দিয়ে কম্প্যাক্ট করার নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি। এছাড়াও ডব্লিউ বিএম এ নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে। রাস্তার দুপাশে মাটির কাজ থাকলেও পুরো রাস্তা ঘুরেও তা চোখে পড়েনি। যদিও এলাকাবাসী এর আগেই রাস্তার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগে উক্ত রাস্তার কাজ বন্ধ করে দেয়। অভিযোগ রয়েছে  এর কিছুদিন পরই ভাড়াটিয়া ঠিকাদাররা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না কর নিম্নমানের খোয়া দিয়ে ডব্লিউ বিএম করে রেখেছেন।
এলজিইডি কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মোস্তাফিজার রহমান ঠিকাদার খায়রুল কবির রানার নামে নেয়া প্রতিটি কাজের দীর্ঘসূত্রিতা স্বীকার করে বলেন, কাজে অনিয়ম কোরাবার সুযোগ নেই। তবে খায়রুল কবির রানা অপেশাদার লোকজনকে লাইসেন্স ভাড়া দেয়ায় কাজ সম্পন্ন করতে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। কার্যাদেশের মেয়াদে কাজ শেষ করতে না পারলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.