এক মাস পর খোঁজ মিলল হাফেজ অলিউল্লাহর, তবে লাশ

দেবীদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধি

মুক্তিপণের টাকা আদায় করতে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার হাফেজ অলিউল্লাহ স্বাধীন (১৭) নামের এক মাদরাসাছাত্রকে কৌশলে নেওয়া হয় বান্দরবানের লামা উপজেলায়। কিন্তু দাবীকৃত টাকা না পেয়ে খুন করা হয় তাকে। পরে খুনের ঘটনা লুকাতে মাটিচাপা দেওয়া হয় মরদেহ। ঘটনার ২৫ দিন পর মাটির নিচ থেকে স্বাধীনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। খুনের ঘটনায় নিহতের খালাতো ভাইসহ দুজনকে আটক করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) রাতে বান্দরবানের লামা উপজেলার রূপসীপাড়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের শিংঝিরি এলাকা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহ
ত হাফেজ অলিউল্লাহ কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ৬ নম্বর ফতেহাবাদ ইউনিয়নের বিষ্ণপুর গ্রামের মোবারক হোসেনের চতুর্থ পুত্র। সে ২০১৭ সালে বষ্ণপুর তাওহিল আল রহমান হাফেজিয়া এতিমখানা কমপ্লেক্স থেকে কোরআনের হেফজ সম্পন্ন করার পর পাগড়ি নিয়েছিল।

ঘাতক নিহতের খালাতো ভাই ফয়েজ আহমেদ (৪০) বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের খাড়াতাইয়া গ্রামের মৃত মালেকের পুত্র এবং অপর ঘাতক বন্ধু আরিফ (১৯) দেবীদ্বার উপজেলার ৬ নম্বর ফতেহাবাদ ইউনিয়নের বিষ্ণপুর গ্রামের মৃত মদন খানের পুত্র।

খুনি ফয়েজ ও আরিফ।

ঘাতকরা গত ২৫ মার্চ দুপুরে বান্দরবন জেলার লামা উপজেলার ৬নং রুপসীপাড়া ইউনিয়নের শিংঝিরি গ্রামের ১ নম্বর ওয়ার্ড ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যবর্তী স্থানের গভীর জঙ্গলে স্বাধীনকে শ্বাস রোধে হত্যার পর মাটিচাপা দিয়ে রাখে। ওই ঘটনার এক মাস পর তার মরদহে উদ্ধার করেছে লামা থানা পুলিশ। একই সঙ্গে ঘাতক ফয়েজ আহমেদ ও আরিফকে আটক করেছে। আটককৃতরা হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলেও পুলিশ জানিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২২ মার্চ স্বাধীনকে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বান্দরবানের লামা উপজেলার রূপসীপাড়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকা শিংঝিরিতে। এর পর তাকে সেখানে আটকে রেখে তার নম্বর থেকে স্বাধীনের বাড়িতে ফোন করে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ চাইতে থাকেন আরিফ ও ফয়েজ। এভাবে ফোনে টানা দুদিন স্বাধীনের ফোন নম্বর থেকে কল করে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে চাপ দিতে থাকেন তারা।

স্বাধীনের মা-বাবা বারবার ছেলের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তাকে না দিয়ে বলা হয় আগে বিকাশে টাকা পাঠাও, তা না হলে স্বাধীনকে জীবন্ত মাটিতে পুঁতে ফেলা হবে, সে এখন আমাদের হাতে বন্দি আছে। টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় পরে আনুমানিক ২৫ মার্চ রাতের কোনো একসময় স্বাধীনকে আধমরা অবস্থায় শিংঝিড়িতে এলাকায় মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়। এর পর থেকে স্বাধীনের ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

নিহতের ভাই ও মামলার বাদী মো. জিলানী বাবু জানান, ফয়েজ ও আরিফ আমাদের পরিবারের কাছে ইমুতে স্বাধীনের অপহরণের বিভিন্ন ছবি দিয়ে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের টাকা না পাওয়ায় গত ২৫ মার্চ স্বাধীনকে তারা শ্বাস রোধে হত্যা করে লামার রূপসীপাড়া ইউনিয়নের শিংঝিরি নামক স্থানের গভীর জঙ্গলে মাটির নিচে পুঁতে রাখে। আটক ফয়েজ ও আরিফ পুলিশের কাছে এ হত্যাকাণ্ডের সত্যতা স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছে।

বান্দরবান লামা থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ত্রীজিত বড়ুয়া জানান, হাফেজ মো. অলিউল্লাহকে অনেক অনুসন্ধানের পর না পেয়ে তার বড় ভাই মো. জিলানী বাবু গত ২৮ মার্চ বুড়িচং থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। মুক্তিপণ দাবি করা মোবাইল ফোন ট্র্যাকের মাধ্যমে নিহতের ভাই মো. জিলানী বাবু লামা থানায় আরো একটি অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে লামা থানা পুলিশ তদন্তে নামে।

লামা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ত্রীজিত বড়ুয়া আরো জানান, তার নেতৃত্বে একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে মো. ফয়েজ ও মো. আরিফকে গ্রেপ্তার করে এবং তাদের স্বীকারোক্তিতে গতকাল মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) লামার গভীর জঙ্গলে মাটির নিচে পুঁতে রাখা স্বাধীনের লাশ উদ্ধার করে।

এ ব্যাপারে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আরিফুর রহমান জানান, এ বিষয়ে সাংবাদিক ছাড়া কেউ জানায়নি বা অভিযোগ করেনি। তবে আমাদের তথ্যানুযায়ী নিহত ছেলেটির বাড়ি দেবীদ্বার উপজেলার বিষ্ণপুর গ্রামে। এ ঘটনায় বুড়িচং থানায় জিডি হয়েছে। বান্দরবানের লামা থানা পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করেছে।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.