আজ উঠছে নিষেধাজ্ঞা, নতুন উদ্যমে ইলিশ ধরার প্রস্তুতি জেলেদের

জাটকা সংরক্ষণে দেশের ৬টি অভয়াশ্রমে দুই মাস সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। যে কারণে চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনার জলেও জেলেদের জাল পড়েনি। তবে সেই নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আজ ৩০ এপ্রিল দিবাগত মধ্যরাতে। তারপরই আবারো মাছ ধরার জাল নিয়ে নতুন করে জলের সঙ্গে মিতালি হবে জেলেদের। এবারে জেলার নদীপারের সিংহভাগ জেলে সরকারের নিষেধাজ্ঞা মেনে চললেও একশ্রেণির জেলে জাটকা শিকারে ব্যস্ত ছিল। যে কারণে চলতি বছর ইলিশের উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরকারি নিষেধাজ্ঞার জন্য দুই মাস নদীতে জাল পড়েনি। এতে আয়ের পথ বন্ধ হওয়ায় কষ্টে জীবন কেটেছে চাঁদপুর পৌরসভার রনাগোয়াল এলাকার মিজান গাজীর। শুধু এমন একজন জেলেই নয়, জেলার উত্তরে ষাটনল থেকে দক্ষিণের চরভৈরবী পর্যন্ত পদ্মা ও মেঘনাপারের হাজারো জেলে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে একই কষ্টে দিন কেটেছে। এই সময় ঋণের কিস্তিসহ মহাজনের দায়দেনায় দুর্ভোগও ছিলে তাদের। তবে আগামীকাল ১ মে থেকে নতুন করে আবারো মাছ ধরা শুরু হবে। তারই প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন জেলেরা। এর আগে জাল বুনে আর মাছ ধরার নৌকা মেরামত করে প্রস্তুত হয়েছেন তারা। নিষেধাজ্ঞার সময় নদীতে না নামতে পারায় কষ্ট হলেও সামনের দিনে কাঙ্খিত ইলিশ পাওয়ার প্রত্যাশা জেলেদের।

চাঁদপুরে মৎস্যজীবী নেতা মানিক দেওয়ান জানান, নদীতে অভিযানে বেশ ঘাটতি ছিল। এতে সুযোগ নিয়েছে একশ্রেণির অসাধু জেলে। ফলে নির্বিচারে জাটকা নিধন হয়েছে। যার কারণে এবছর ইলিশ উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি তালিকায় চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন, এমন জেলের সংখ্যা প্রায় ৫২ হাজার। আর তাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা আরো তিন লাখ।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী জানান, পদ্মা ও মেঘনার অভয়াশ্রমে গত দুই মাসে জাটকা সংরক্ষণ অভিযানে ৩৯ মেট্রিক টন জাটকা, ৩৮ কোটি ৮ লাখ মিটার নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাটকা নিধনের দায়ে তিন শতাধিক জেলেকে আটক করে কারাদণ্ড এবং ৫ শতাধিক জেলেকে আর্থিক জরিমানা করে ভ্রাম্যমান আদালত। ইতোপূর্বে এতো বেশি জাটকা এবং কারেন্ট জালের চালান ধরা পড়েনি।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, নিষেধাজ্ঞার সময়ে বিশাল পদ্মা ও মেঘনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে একশ্রেণির জেলে জাটকা নিধনে ব্যস্ত ছিল।

এ বিষয় চাঁদপুর জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জানান, জাটকা সংরক্ষণে প্রশাসনের উদ্যোগের কোনো ঘাটতি ছিল না। এসময় জেলে প্রতি প্রতিমাসে ৪০ কেজি করে চাল বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। তারপরও কোথাও কোথাও জেলেরা জাটকা নিধনে তৎপর ছিল। আর যারা এসব কাজে জড়িত ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

এদিকে, দেশের অন্যতম মৎস্যবিজ্ঞানি ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান জানান, সরকারের নানা উদ্যোগে জাটকা সংরক্ষণে কর্মসূচি সফল হলে দেশে মোট ইলিশের উৎপাদন সাগে ৫ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে পৌঁনে ৬ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হবে।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.