ভ্যানচালক হত্যার রহস্য উদঘাটন, জড়িতদের গ্রেফতার

হারুন অর রশিদ,পঞ্চগড় প্রতিনিধি

ভ্যানচালক হত্যার রহস্য উদঘাটন একই সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করেছে পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশ। গত ২৭ মার্চ শনিবার রাতে ভ্যান চালক আলমগীর কে গলায় ছুড়িকাঘাত করে হত্যা করে ভ্যান ছিনিয়ে নিয়ে সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের বকশিগছ এলাকা থেকে পালিয়ে যায় দূবৃত্তরা । পরে ২৮ মার্চ রোববার খবর পেয়ে পুলিশ গলাকাটা অবস্থায় আলমগীরের লাশ উদ্ধার করেন। লাশ উদ্ধারের সাথে সাথে পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে।

এরপর থেকেই পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলীর নির্দেশে জড়িতদের খুঁজে বের করতে পুলিশ ও সিআইডি যৌথভাবে তাদের তৎপরতা চালায় । বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) জেলা পুলিশ ও সিআইডি’র যৌথ অভিযানে হত্যার রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো পঞ্চগড় সদর উপজেলার সুকদেবপাড়া গ্রামের মৃত জরিফ হোসেনের ছেলে ইউসুফ আলী (২৫), কামারভিটা গ্রামের আজগর আলীর ছেলে আশিক ওরফে বাবু (২১) এবং পাটোয়ারী পাড়া গ্রামের মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে রফিকুল ইসলাম (৩৫)। তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া চার্জার ভ্যান ও আলমগীরের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামীরা ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করছে।

শুক্রবার (২ এপ্রিল) সকালে পঞ্চগড় জেলা পুলিশের পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়, পুলিশ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায় ঘটনার দিন গত ২৭ মার্চ ইউসুফ ও আশিক ওরফে বাবু দুই জনই ভ্যান ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে তেঁতুলিয়ার শালবাহান বাজারে যাবে বলে দুইশত টাকায় আলমগীরের ভ্যানটি ভাড়া করে। পরে তারা ভ্যান চালককে বসিয়ে চা নাস্তার নাম করে সময় ক্ষেপন করতে থাকে। আসামীদ্বয় ভ্যান চালক আলমগীরকে নিয়ে নিউ মার্কেট রাস্তা হয়ে শালবাহান বাজারের দিক দিয়ে ভজনপুর কলেজ হয়ে দেবনগর হয়ে ময়নাগুড়ি যায়। তারপরে বকশিগঞ্জ জোতগাঁও এলাকায় নদীর পাশে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় চার্জার ভ্যানের চার্জ শেষ হয়ে যায়। পরে আসামীদ্বয় ধাক্কা দিয়ে ভ্যান চালক আলমগীরকে রাস্তায় নামায় এবং আসামী ইউসুফ আলমগীরের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে তাকে লাথি মেরে রাস্তার নিচে গর্তে ফেলে দেয়। আসামী ইউসুফ সাথে সাথে রাস্তার নিচে গর্তে নামে। আসামী আশিক ওরফে বাবু ও ইউসুফ পরিকল্পনামতে ইউসুফের কোমরে থাকা ছুরি দিয়ে ইউসুফ আলমগীরকে এলোপাথারিভাবে ছুরিকাঘাত করতে থাকে। এক পর্যায়ে আলমগীর আঘাতের ফলে নিস্তেজ হয়ে পড়লে হত্যাকারীরা আলমগীরের মৃত্যু নিশ্চিত করে। ইউসুফ তার ব্যবহৃত ছোরাটি বাঁশ ঝাড়ের দিনে জঙ্গলে ছুড়ে ফেলে দেয়। পরে আসামীদ্ব আলমগীরের ভ্যানটি ঠেলে নিয়ে কিছুদুর এসে আরেক ভ্যান চালককে চার্জ নেই বলে তার ভ্যানের সাথে বেধে জগদল বাজারে নিয়ে আসে। পরবর্তিতে তারা জগদল বাজার থেকে ভ্যানটি পঞ্চগড় পৌরসভাস্থ পাটোয়ারী পাড়ায় এনে চোরাই ভ্যান ক্রেতা নামে পরিচিত আসামী রফিকের নিকট সাত হাজার ৫শ টাকায় বিক্রয় করে।

এর আগে গত ৯ জানুয়ারি আসামী ইউসুফ ও আশিক ওরফে বাবু গত ৯ জানুয়ারি কাজী ফার্মের নিকট একটি ব্যাটারী চালিত অটো একইভাবে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে অটোর যান্ত্রীক ত্রুটির কারণে অটোটি নিতে ব্যর্থ হয়। তবে অটো চালক পঞ্চগড় সদরের চাকলাহাট ইউনিয়নের নমলাগ্রামের মৃত মনজুরুল ইসলামের ছেলে লাবু ইসলাম (১৮) কে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলায় রক্তাক্ত জখম করে। অত্র মামলার ঘটনায় জড়িত ও গ্রেফতারকৃত আসামীরা পেশাদার অপরাধী। তারা বিভিন্ন সময় যাত্রী বেশে চার্জার ভ্যান ছিনিয়ে নিয়ে ক্রয় বিক্রয় করে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।

অভিযানে নেতৃত্ব দেন পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) ও (অতিরিক্ত দায়িত্বে সদর সার্কেল) আলমগীর রহমান ও সিআইডি’র সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল হামিদ।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.