- গোসল করতে গিয়ে নদীতে ডুবে এক বৃদ্ধ’র মৃত্যু - November 14, 2024
- একজন সৎ সাহসী ও মানবিক লেডি পুলিশ অফিসারের জীবন কালের গল্প - November 14, 2024
- ফরিদগঞ্জে চোরাইকৃত অটোরিক্সা ও সিএনজি স্কুটারসহ চার চোর গ্রেফতার - November 14, 2024
সাইফুর রহমান শামীম,, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
‘তোমাকে পেলে হয়ত আমি বেঁচেই যেতাম!’ বা ‘পাওয়া না পাওয়ার এই দুনিয়ায় তোমাকে পেলে হয়ত সব পাওয়া হয়ে যেতো!’ অথবা ‘প্রেমিকার শরীর অন্য কেউ ছোঁয়ার আগে প্রেমিকের মৃত্যু হোক!’ কিংবাব ‘আচ্ছা, যেই ঘরে এক সময় শান্তির ঘুম ঘুমিয়েছি, যেই ঘরের ফ্যানের বাতাসে গায়ের ঘাম শুকিয়েছি, সেই ঘরে সেই ঘরের ফ্যানের সাথে নিজেকে ঝোলানো কি ঠিক হবে? এই ঘর এই রুমে ছোট ভাইকে নিয়ে প্রতিটি রাত কাটিয়েছি, সেই ঘরে কি আদৌ ঝুলে যাওয়া ঠিক হবে? ছোট ভাই যখন এই ঘরে ঘুমাবে, “বারবার মনে হবে বড় ভাই মাথার উপর একটা দড়িতে ঝুলে আছে!’
এমনই সব পোস্ট ছিল অন্তর রাজের। পরিচিত জনদের নিকট তিনি রাজু নামেই পরিচিত ছিলেন। অন্তর রাজের প্রোফাইলে ম্যারিটাল স্ট্যাটাসে ‘ডিভোর্সড’ আপডেটেড ছিল। তবে সোশ্যাল মিডিয়া সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রেমিকার অন্যত্র বিয়ে হয়ে যাওয়ায় হতাশায় ভুগছিলেন অন্তর রাজ।
প্রায় দীর্ঘদিন ধরেই ফেসবুকে আত্মহত্যার পোস্ট দিচ্ছিল অন্তর। সেসবের আপডেট তথ্যও পাওয়া গেছে। ফেসবুকের বন্ধুরা নানাভাবেই বোঝাতে চেষ্টা করেছে তাঁকে। কোনোকোনোবার বুঝেছে অন্তর, ফিরে এসেছে। ফের ফিরে গেছে সেই আত্মহত্যার দিকে।
সর্বশেষ একটি পোস্ট দেখা যায় সে লিখেছে, ‘টেনশন নিয়েন না, যা করার করে ফেলেছি, ৭.৫ এমজি ২০ টা, আর ১০ এমজি ২০ টা, ঘুমাচ্ছি চিরতরে ঘুম। কোনো এক ব্রিজের ওপর বসে আছি। টুপ করে পড়ে যাবো একটু পর।’ এরপরেই হাসির ইমোজি।
জানা যায়, কুড়িগ্রামের ধরলা নদী থেকে অন্তরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গণমাধ্যমে খবর এসেছে, ‘কুড়িগ্রামের ধরলা নদীতে ভেসে ছিল এক অজ্ঞাত যুবকের লাশ। শনিবার সকালে স্থানীয় লোকজন নদীর তীরে লাশ ভেসে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে সকাল ৯টার দিকে লাশটি উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়া ওই যুবকের বয়স আনুমানিক ৩০ বছর। লাশের সঙ্গে থাকা একটি ব্যাগও উদ্ধার করেছে পুলিশ।’
আত্মহত্যার ঘোষণা দেওয়ার পূর্বে সর্বশেষ পোস্টে অন্তর লিখেছিলেন দীর্ঘ পোস্ট। ১৮ ফেব্রুয়ারি লেখা ওই পোস্টে লিখেন, ‘কি দিয়ে শুরু করব, বুঝে উঠতে পারছি না। এখন আমাকে অনলাইনে দেখলে নির্ঘাত সবাই গালি গালাজ করবে। কেউ বলবে নাটকবাজ, কেউ বলবে ভাইরাল হতে চাই, কেউ বলবে কাউকে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করতে চাচ্ছি, কেউ কুলাঙ্গার বলে গালি দিবে, কেউ বলবে টাকা মেরে খেয়েছি আরো কত কি!
হ্যাঁ আসলেই আমি নাটকবাজ, কারণ আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম, কিন্তু কোন ওয়ে পাচ্ছিলাম নাহ! তাই বাধ্য হয়ে নাটক করতে হয়েছে। অবশ্য পুরোপুরি নাটক বলাও চলে নাহ, কারণ প্রতিটা নাটকের সমাপ্তি আমি জীবন দিয়েই শেষ করতে চেয়েছিলাম। পারিনি কিংবা করতে দেয়নি আমাকে। সুইসাইড পোস্ট করেছিলাম যদি এটা দেখে কারো করুণা হয়, কেউ যেনো আমার জীবনটা ভিক্ষা দেয়, কিন্তু হয়নি এমন কিছুই! আমাকে বাচিয়ে রাখার আশা দেখিয়ে ঠকিয়েছে প্রতিনিয়ত! তাই যেতে পারিনি সময় করে, তাই আমি আজ নাটকবাজ।
ভাইরাল? আরে ভাই, ভাইরাল হয়ে কি হবে? যে মানুষ প্রচন্ড মানুষিক যন্ত্রণায় তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছে তাকে এভাবে কেউ ট্রিট করে। খাঁড়াও, মরলে ভূত হয়ে তোমাদের ঘাড় মটকাবো।
হ্যাঁ আমি ইমোশনাল টর্চার করতে চেয়েছিলাম, করেছিও। কেনো করেছি জানেন, কারণ আমি মরতে চাইনি। আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম। যে জিনিসটা চেয়েছি, তার জন্য কি এতোটুকুও করা যায় না? জীবন বাঁচানো ফরজ, আমি ফরজ কাজটিই করতে চেয়েছিলাম। যেখানে বেঁচে থাকার একটিই মাত্র৷ পথ সেখানে সেই পথে হাঁটতে চাওয়া কি অপরাধ? কে মরতে চাই বলুন তো!
হ্যাঁ অবশ্যই আমি কুলাঙ্গার। যে মানুষগুলো আমাকে গায়ের রক্ত পানি করে তিলে তিলে গড়ে তুলেছে, তাদের কথা আমি ভাবিনি। যে মানুষগুলো আমার প্রতি বিশ্বাস রেখে বড় করেছে, বড় হয়ে তাদের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য, আমি তাদের কথা ভাবিনি। যে ছোট ভাইটা, আমার এসব পাগলামী দেখে কেদে চোখ ভাসিয়েছে, তার চোখের জলের দাম আমি দিতে পারিনি। আমি তো কুলাঙ্গারই। কিন্তু কাউকে তিলে তিলে কষ্ট না দিয়ে একবারেই সব শেষ করে দেওয়াটা কি বেটার অপশন নাহ। প্রিয়জনদের সামনে ধুকে ধুকে মরার কষ্টটা না দিয়ে একবারেই সব শেষ করে দিলাম। বছর ধরে না কেঁদে একবারই কাদুক।
চলার পথে আর্থিক লেনদেন হয়েই থাকে। দু একজন পাওয়ানাদার, দেনাদার থেকেই যায়। আমার কাছেও দু একজন পাবে, আমিও পাঁচ-ছয় জন থেকে পাবো। সব কিছু শেষ করেই যেতে চেয়েছিলাম, পারিনি। কারণ এত কষ্টের মাঝে এসব মাথায় ঢুকাতে পারিনি। সবাইকে শোধ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। সময় মত পেয়ে যাবেন। আর যদি না পান, তাহলে মাফ করে দিয়েন। আমার শরীরে মাংস বেশি নেই যে আখিরাতে শোধ করে নিবেন। লস হবে আপনাদের!
এগুলো আমার আত্মসমর্পণ করার চেষ্টা মাত্র। যারা এমন ভাবেন তারা যদি এসব শোনার পরও খুশি না হোন, তাহলে আমার লাশকে আবার ফাসিতে ঝুলায়েন। শাস্তি দিয়েন আমাকে।
এই পোস্টটা যখন পড়ছেন, তখন হয়ত আমার ডেড বডিতে পচন শুরু হয়েছে কিংবা কোন এক লাশ কাটা ঘরে লাশ সনাক্ত না হওয়ায় পড়ে আছে বেওয়ারিশ হিসাবে দাফনের জন্য। আমি জানি আমি চলে যাওয়াতে কারো বাল ছেড়া যাবে না। গেলে আমার ফ্যামিলিরই যাবে। বাড়ির বড় ছেলে। প্রতিবেশিদের হাজার কথা শুনতে হবে। আমি সরি মা, আমি সরি বাবা, আমি সরি মাসুদ। এছাড়া আমার কোন উপায় ছিলো না। আমি খুব কষ্টে ছিলাম মা, বুঝাতে পারব না মা এই কষ্ট কতটা তীব্র। এই কষ্ট সহ্য করার সামর্থ আমার নেই মা। মাফ করো তোমরা আমাকে। আমি বেঁচে থাকলে আরো জ্বলতে হতো তোমাদের, অনেক জ্বালিয়েছি, আর জ্বালাবো না তোমাদের।
আর কেনো মরছি, কার জন্য মরছি, কিসের জন্য মরছি এটা না হয় ঘোলাটেই থাকুক। আমিও প্রকৃতির মতই রহস্য রাখতে পছন্দ করি কিংবা রাখতে হয়।
আল-বিদা বলতে বলতে হাঁপিয়ে উঠেছি, আপনাদেরকেও বিরক্ত করেছি। কথা দিচ্ছি আর কখনো বিরক্ত করবো না। আসি এবার, আল্লাহ হাফেজ। পরের জন্মে দেখা হবে।
হ্যাঁ এই পোস্ট যখন নেটিজেনরা পড়ছিলেন, তখন নিশ্চুই অন্তর রাজের লাশে হয়তো পচন ধরেছিল। ১৯ ফেব্রুয়ারি অন্তর রাজের মৃত্যু হয়।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.