বাংলাদেশ ছাত্রলীগ: লাল-সবুজের অহংকার

ড. কাজী এরতেজা হাসান

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া সংগঠনের নাম বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সংগ্রামে বলিষ্ঠ নেতৃত্বদানকারী দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। বাংলা ও বাঙালির স্বাধীনতা-স্বাধিকার অর্জনের লক্ষ্যেই মূল দল আওয়ামী লীগের জন্মের এক বছর আগেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল গৌরব ও ঐতিহ্যের এ ছাত্র সংগঠনটি। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। তার নেতৃত্বেই ওই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে আনুষ্ঠানিকভাবে এর যাত্রা শুরু হয়। তৎকালীন তরুণ নেতা শেখ মুজিবের প্রেরণা ও পৃষ্ঠপোষকতায় এক ঝাঁক মেধাবী তরুণের উদ্যোগে সেদিন যাত্রা শুরু করে ছাত্রলীগ। ৭৩ বছরে ছাত্রলীগের ইতিহাস হচ্ছে জাতির ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা, মুক্তির স্বপ্ন বাস্তবায়ন, স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনা, গণতন্ত্র প্রগতির সংগ্রামকে বাস্তবে রূপদানের ইতিহাস। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল সংগ্রামে ছাত্রলীগ নেতৃত্ব দিয়েছে এবং চরম আত্মত্যাগের মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে।

১৯৪৯ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল হিসাবে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগের আত্মপ্রকাশ ঘটে, যা পরে আওয়ামী লীগ নাম ধারণ করে এ দেশের স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়। এ প্রেক্ষাপটে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বাঙালি জাতির ইতিহাসে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে বাঙালির ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা, ৫৪’র সাধারণ নির্বাচনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ পরিশ্রমে যুক্তফ্রন্টের বিজয় নিশ্চিত, ৫৮’র আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা, ৬৬’র ৬ দফা নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া, ৬ দফাকে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে পাক শাসকের পদত্যাগে বাধ্য করা এবং বন্দিদশা থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করা, ৭০’র নির্বাচনে ছাত্রলীগের অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখসমরে ছাত্রলীগের অংশগ্রহণ, স্বাধীনতা পরবর্তী সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্রের উত্তরণসহ প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগের অসামান্য অবদান দেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠনের নেতাকর্মীরা পরে জাতীয় রাজনীতিতেও নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং এখনও দিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান জাতীয় রাজনীতির অনেক শীর্ষনেতার রাজনীতিতে হাতেখড়িও হয়েছে ছাত্রলীগ থেকে। উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ও প্রাচীন ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের ৭৩তম বার্ষিকী উপলক্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। গৌরব, ঐতিহ্য ও সংগ্রামের ৭৩ বছরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রলীগ তিনদিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

সোমবার সকাল ৭ টায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সব সাংগঠনিক কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ৮ টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং ৯ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে কেক কাটা হবে।

এদিকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকাল ১০ টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, দোয়া মাহফিলে যোগ দিবেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মনোনীত একটি প্রতিনিধি দল।

এবার বর্তমান ছাত্রলীগ নিয়ে কিছু কথা :রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং গোলাম রাব্বানীকে ছাত্রলীগের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে সংগঠনের অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আল নাহিয়ান খান জয় এবং লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেয়ার পর ঠিক এক বছর আগেই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাদের ভারমুক্ত করে দেন। সেই থেকে দীর্ঘ ১ বছর নানামুখী সমালোচনা থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জয়-লেখকের কমিটির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। করোনাকালীন সময়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, সেদিক বিবেচনায় মহান জাতীয় সংসদেও ছাত্রলীগের প্রশংসা করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

এছাড়া নানা সময়ে ছাত্রলীগকে ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে আনতে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন জয়-লেখকের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগ। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এখনো পাওয়া যায়নি। সাংগঠনিক ব্যর্থতার বিষয়টিও কিছু কিছু গণমাধ্যমে এসেছে। এক্ষেত্রে আমি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে জয়-লেখককে খুব কাছ থেকে দেখেছি এমনকি পর্যবেক্ষণ করেছি। তারা সত্যিকার অর্থে যথেষ্ট সফলতা নিয়ে এই করোনা মহামারির সময় কাজ করে গেছেন। ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ অভিভাবক শেখ হাসিনা এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত ৪ জন জাতীয় নেতার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করে তারা কোনো কাজ করেনি। এটাই তাদের সবচেয়ে বড় সফলতা বলে আমি মনে করি। উদাহরণ হিসেবে ছাত্রলীগকে বিতর্কমুক্ত করতে তারাই ভারমুক্ত হওয়ার পরই বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে ইতিহাসও সৃষ্টি করেছে। এবার তারা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পর হয়তো শূন্যপদগুলোও পূরণ করবে-এমন নির্দেশনাও রয়েছে বলে জানা গেছে।

ছাত্রলীগের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন আল নাহিয়ান খান জয় এবং লেখক ভট্টাচার্য। তারা নিয়মিত ছাত্রদের প্রধান্য দিচ্ছেন জেলা কমিটিগুলো করার ক্ষেত্রে। এছাড়া মাদক ব্যবসায়ীদের কোনোভাবেই ঠাঁই দেয়া হবে না, এমনকি বিতর্কিত অনুপ্রবেশকারীদের জন্য ছাত্রলীগের দ্বার রুদ্ধ করারও প্রতিজ্ঞা নিয়ে কাজ করছেন জয় লেখক। তাই দৃঢ়ভাবে প্রত্যাশা করি, জয় লেখকের হাতেই বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার আদর্শিক ছাত্রলীগ, লাল সবুজের অহংকার ফিরে পাবে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আরো সমৃদ্ধির পথে, ঐতিহ্যের পথে এগিয়ে যাবে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক ভোরের পাতা, দ্য পিপলস টাইম।

পরিচালক, এফবিসিসিআই। সদস্য, কেন্দ্রীয় শিল্প-বাণিজ্য উপকমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ইরান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.