কুড়িগ্রামের ঝুনকার চরে ‘প্রক্সি টিচার’ দিয়ে চলে ক্লাশ

সাইফুর রহমান শামীম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি 

সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ৪ জন শিক্ষক স্কুলে আসেন নিজেদের ইচ্ছেমত। শিক্ষার্থীরা তাঁদের নামই জানে না। ১১ হাজার টাকায় নেওয়া ৩ ভাড়াটে শিক্ষক দিয়ে চলছে বিদ্যালয়টি। তাও পালা করে তাঁরা দায়িত্ব পালন করেন। এই চিত্র দেখা গেছে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঝুনকার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।

কুড়িগ্রাম জেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে যাত্রাপুর বাজার। সেখান থেকে ঘোড়ার গাড়িতে চেপে যাত্রাপুর ঘাটে পৌঁছানোর পর শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় আধা ঘণ্টার পথ ভগবতিপুরের।

ব্রহ্মপুত্রের চর ভগবতিপুরের এই স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, প্রথম শিফটের ছুটি হয়েছে সবেমাত্র। লুঙ্গি আর পাঞ্জাবি পরা শিক্ষক রেজাউল করিম বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি, বিস্কুটের হিসাবসহ অলিখিতভাবে প্রধান শিক্ষকের সব দায়িত্ব পালন করছেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় মো: আসাদুজ্জামান নামের একজন সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাছাড়া আনোয়ার হোসেন, ইলোরা হক ও শামস শাহরিয়ার নামের আরো ৩ জন সহকারী শিক্ষক রয়েছেন কাগজে-কলমে। বাস্তবে সরকারি বেতন-ভাতাপ্রাপ্ত এই শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে যান কমই। তাঁরা থাকেন কুড়িগ্রাম শহরে। তাঁদের বদলে ১১ হাজার টাকায় তিনজন ‘প্রক্সি টিচার’ রেখেছেন। তাঁরা হলেন রেজাউল করিম, আবুল হোসেন ও শেফালী আক্তার। শেফালী আক্তার দুই বছর ধরে এই বিদ্যালয়ে ‘প্রক্সি টিচার’ নিয়োগ হলেও বাকি দুজন ছয়-সাত বছর ধরে আছেন। তবে শিক্ষার্থীরা জানায়, প্রক্সি টিচাররা সবাই একসঙ্গে আসেন না, পালা করে আসেন।

স্কুলে খাতা-কলমে ১৭৬ জন শিক্ষার্থী থাকলেও বাস্তবে ক্লাশ প্রতি ৮-১০ জনের বেশি শিক্ষার্থী পাওয়া যায়নি।

প্রক্সি শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, ‘অনেক দিন ধরে দায়িত্ব পালন করছি, উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসের সবাই আমাকে চেনেন।’

প্রক্সি শিক্ষক শেফালী আক্তার বলেন, ‘স্যাররা মাঝেমধ্যে আসেন।’

তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নাজমীন আক্তার, আতিকুর রহমানসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, তারা প্রক্সি তিন শিক্ষককে চেনে। আসল শিক্ষকদের চেনে না। নামও জানে না। তারা কুড়িগ্রাম শহরে নাকি থাকেন।

ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো: আসাদুজ্জামান জানান, এলাকার লোকজনের মতামতের ভিত্তিতে ৩ জন প্রক্সি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো: শহিদুল ইসলাম জানান, ঝুনকার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ সদরের ৮টি বিদ্যালয়ে প্রক্সি শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ রয়েছে। সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.