চাঁদপুরের  মেঘনায় নদীতে দুই লঞ্চের সংঘর্ষের যাত্রী নিহত সংখ্যা ২ ঘটনায় আটক ২

স্বাধীন বাংলা নিউজ টিভি, স্টাফ রিপোর্টার মোঃতপছিল হাছানঃ

চাঁদপুরের মাঝ কাজীরচর সংলগ্ন মেঘনা নদীতে দুটি লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই যাত্রী নিহত এবং আটজন আহতের ঘটনায় এমভি ফারহান-৯ লঞ্চের মাস্টার ও সুকানিকে গ্রেফতার করেছে পিরোজপুর সদর থানা পুলিশ।

১৩ জানুয়ারি সোমবার বিকেল ৪টার দিকে ভান্ডারিয়া লঞ্চঘাট থেকে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা হলেন এমভি ফারহান-৯ এর মাস্টার মো. আফতাব হোসেন ও সুকানি মো. আব্দুল হামিদ।
এদিকে লঞ্চ দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে দুর্ঘটনায় নিহতরা মা-ছেলে বলে জানিয়েছে পুলিশ।লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন- বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার গাড়ুরিয়া ইউনিয়নের ভান্ডারিকাঠি গ্রামের রুবেল খানের স্ত্রী মাহমুদা বেগম (২৪) ও তার ছেলে মুমিন খান (৭)।

অন্যদিকে, আহতদেরকে উদ্ধার করে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হতাহতদের মধ্যে নিহত ২ জনসহ আহত ৩ জন এমভি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের এবং বাকি আহত ৫ জন এমভি ফারহান-৯ লঞ্চের যাত্রী ছিলেন। রোববার দিনগত রাত ১টার দিকে বরিশাল-ঢাকা নৌ পথের মেঘনা নদীতে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
কীর্তনখোলা লঞ্চের একাধিক যাত্রী জানান, রোববার রাত ৯টার দিকে বরিশাল থেকে যাত্রী নিয়ে এমভি কীর্তনখোলা-১০ ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। রাত ১টার দিকে লঞ্চটি চাঁদপুরের মাঝ কাজীর চর সংলগ্ন মেঘনা নদী অতিক্রমকালে ঢাকা থেকে পিরোজপুরের হুলারহাট হয়ে ভান্ডারিয়াগামী এমভি ফারহান-৯ লঞ্চটি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের ডানপাশে মাঝ বরাবর সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে কীর্তনখোলা লঞ্চের মাঝ বরাবর দ্বিতীয় তলার অবকাঠামো ব্যাপক ক্ষতি হয়। দুর্ঘটনায় কীর্তনখোলা লঞ্চের দ্বিতীয় তলার ডেকে থাকা যাত্রী মা মাহমুদা বেগম ও ছেলে মুমিন নিহত হয়।
দুর্ঘটনায় ওই লঞ্চের আরও ৩ যাত্রী আহত হন। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দুর্ঘটনার পর লঞ্চটি দ্রুত চাঁদপুর নদী বন্দরে গিয়ে আহত ৩ জনকে চিকিৎসার জন্য চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করে। পরে লঞ্চটি ফের ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে সোমবার সকাল পৌঁনে ৯টায় গিয়ে সদরঘাটে পৌঁছে। এরপর নিহত মা ও ছেলের মৃতদেহ দক্ষিণ কেরানিগঞ্জ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
কীর্তনখোলা লঞ্চ কোম্পানির সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. বেল্লাল হোসেন জানান, এমভি ফারহান-৯ লঞ্চের কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে কীর্তনখোলা লঞ্চের দুই যাত্রী নিহত ও ৩ যাত্রী আহত হয়েছেন। লঞ্চেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এমভি ফারহান লঞ্চের বিরুদ্ধে থানায় এবং মেরিন কোর্টে মামলা করা হবে বলে জানান সহকারী মহাব্যবস্থাপক বেল্লাল হোসেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে এমভি ফরহান লঞ্চের মাস্টার মামুনুর রশীদ রওশন বলেন, মাঝের চরের ওই এলাকায় এর আগেও বিভিন্ন নৌযানের দুর্ঘটনা ঘটেছে। ঘন কুয়াশা ও সরু চ্যানেল ও ডুবোচরের কারণে লঞ্চ চলাচলে সেখানে সমস্যা হয়। একারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
দক্ষিণ কেরানিগঞ্জ থানা পুলিশের ওসি শাহ জামান জানান, লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহত মা ও ছেলের মৃতদেহ তার থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। মৃতদেহ দুইটির ময়নাতদন্ত ও আইনী প্রক্রিয়া শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিউটিএ) এর প্রধান কার্যালয়ের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বন্দর বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক সাইফুল ইসলামাকে প্রধান করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে ওই কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চটিকে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
পিরোজপুর সদর থানা পুলিশের ওসি নুরুল ইসলাম বাদল জানান, বিকেল ৪টার দিকে এমভি ফারহান-৯ লঞ্চটি ভান্ডারিয়া লঞ্চঘাটে এসে পৌঁছে। এরপর যাত্রী নামানো হলে ভান্ডারিয়া থানা পুলিশের সহায়তায় মাস্টার ও সুকানীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের ওই লঞ্চযোগেই পিরোজপুর সদরে নিয়ে আসা হচ্ছে। ওসি নুরুল ইসলাম বাদল জানান, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর নির্দেশনা মতো লঞ্চটিও পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়েছে।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.