উপকূলে বইছে ঝড় বুলবুল

নিজস্ব প্রতিবেদক
সাতক্ষীরা শ্যামনগরে নিরাপদে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে

ধীরে ধীরে আরও উপকূলের দিকে এগুচ্ছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। শনিবার বিকাল চারটার দিকে বুলবুল মোংলা সমুদ্রবন্দরের ২১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। রাতের যে কোনও সময়ে বুলবুল বাংলাদেশের খুলনা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকা অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্য বিভাগে ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ঝড় পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবেলায় সশস্ত্র বাহিনীও প্রস্তুত রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার ৩০ লাখ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।

শনিবার দুপুরে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এনামুর রহমান বলেন, ‘ইতোমধ্যে ৩ লাখ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাকি ১৮ লাখ লোককেও ৪ হাজার ৭১টি আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’

ঝুঁকিপূর্ণ খুলনা, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বরগুনা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, ভোলা ও বাগেরহাট এ মোট ৯টি এলাকার প্রতিটিতে ১০ লাখ টাকা, ২০০ টন চাল, এক লাখ টাকা করে গোখাদ্য বাবদ এবং এক লাখ টাকা করে শিশু খাদ্য বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, চট্রগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় ৫ লাখ করে মোট ৩০ লাখ টাকা  এবং মোট ৬০০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে আইএসপিআর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর সব সেনানিবাস, ঘাঁটি, জাহাজ ও হেলিকপ্টার।

অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে বেশি ক্ষতি বাংলাদেশেই হতে পারে বলে আভাস দিচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা। সন্ধ্যার দিকে আঘাত হানার ধারণা করা হলেও বুলবুল মধ্যরাতের দিকে আঘাত হানতে পারে বলে ভাষ্য আবহাওয়াবিদদের।

শনিবার পৌনে আটটায় ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আয়শা খাতুন সংবাদ সম্মেলন করে তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত নাগাদ পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূল (সুন্দরবনের কাছ দিয়ে) অতিক্রম করতে পারে। এরইমধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় দমকা বেগে ঝড়োহাওয়া বয়ে যাচ্ছে।

এ আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি অতিক্রমের সময় চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিসহ ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।’

এরইমধ্যে ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়োহাওয়ায় ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চার ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় রয়েছে। আর চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় রয়েছে।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.