- The story of Idris Ali, a humanitarian police inspector of Dhanbari police station - October 19, 2024
- গণঅভ্যুত্থানে শাহাদৎ বরণকারীদের রুহের মাগফিরাত কামনা ধনবাড়ীতে বিএনপির উদ্যোগে - October 19, 2024
- কাজীপুর জবর দখলকৃত জমিতে রোপন করা ফসল নষ্ট করে উল্টো প্রকৃত জমির মালিককে ফাসানোর চেষ্টা - October 18, 2024
ভয়াবহ আকার ধারণ করা মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে মৃত্যুর মিছিল থেমে নেই। ঈদের ছুটির মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত রবিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বাপেক্স) কর্মকর্তা, সিআইডির সদস্য, বৃদ্ধ ও শিশু রয়েছে।
সরকারিভাবে চলতি বছর ডেঙ্গুতে ৪০ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ও বিভিন্ন জেলার চিকিৎসকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে সারাদেশে অন্তত ১৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, এবছর সব মিলিয়ে গত সোমবার পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪৩ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে এ মাসের প্রথম ১১ দিনেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রায় ২৫ হাজার মানুষ।
ঢাকা টাইমসের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরÑ
বুধবার মৃত্যু দুজনের
ভোরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আওলাদ হোসেন (৩২) একজনের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি মুন্সিগঞ্জ সদরে। বাবার নাম তোফাজ্জল হোসেন। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে আওলাদকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আওলাদ হোসেনের মামা আক্তার হোসেন বলেন, তিন থেকে চার দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন আওলাদ। গতকাল শরীর খুব খারাপ হওয়ায় এখানে আনা হয়। ঢামেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) নাছির উদ্দিন এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
মাদারীপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মাদারীপুরের শিবচরে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাজী আবদুল মজিদ (৭৫) নামে আরো এক রোগী মারা গেছেন। এ নিয়ে ডেঙ্গুতে এ পর্যন্ত জেলায় ছয় জনের মৃত্যু হলো। গতকাল ভোর রাতে শিবচরের নিজ বাড়িতে আবদুল মজিদের মৃত্যু হয়। তিনি গত এক সপ্তাহ ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ছিলেন।
আব্দুল মজিদের ছেলে এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আব্বাকে গত এক সপ্তাহ ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছি। তার শরীরে প্লাটিনাম ২০ হাজার ছিল। ঢাকা থেকে শিবচরে গতকাল সন্ধ্যার দিকে আসেন। বুধবার ভোর রাতে তিনি মারা যান।
মাদারীপুর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এখন পর্যন্ত ছয় জন ডেঙ্গুরোগী মারা গেছেন। যার মধ্যে কালকিনি ও শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুই জন মারা গেছেন। বাকি ৪ জন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ, বরিশাল মেডিকেল কলেজ ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন।
মঙ্গলবার তিনজনের মৃত্যু
গত মঙ্গলবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এদিন সকালে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সামিয়া নামের ৫ বছর বয়সী এক শিশু এবং বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে মাহবুব উল্লাহ নামের বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বাপেক্স) এক প্রকৌশলীর মৃত্যু হয়েছে।
আর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান মোহাম্মদ রাসেল নামের ৩২ বছর বয়সী এক যুবক। তিনি ঢাকার রমনা পার্কের পরিচ্ছন্নতা কর্মী ছিলেন। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার ছেলে রাসেল ঈদের ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিলেন।
বিএসএমএমইউর জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার মজুমদার ঢাকাটাইমসকে জানান, বাপেক্সের প্রকৌশলী মাহবুব উল্লাহ সোমবার দিবাগত রাতে আইসিইউতে ভর্তি হয়েছিলেন। মঙ্গলবার সকালে তার মৃত্যু হয়।
মাহবুব উল্লাহ ডেঙ্গুতে ভুগছিলেন। ঈদের দিন সকালে তিনি বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ভর্তি হন। পরে সোমবার রাতে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। তার বাড়ি রাজবাড়ী জেলার পাংশায়।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের উপ পরিচালক মামুন মোর্শেদ জানান, দুদিন আগে আগারগাঁও তালতলা থেকে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল সামিয়া। সে ছিল শক সিনড্রোমের রোগী। মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৬টায় সামিয়া মারা যায়।
খুলনা ব্যুরো জানিয়েছে, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়ি গ্রামের মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে রাসেল ঢাকায় অসুস্থ হয়ে বাড়ি গিয়েছিলেন। ডেঙ্গু ধরা পড়ায় কয়েক দিন আগে তাকে গোপালগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বলে জানান খুলনার সিভিল সার্জন এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক।
শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় রবিবার তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার সকালে সেখানেই তার মৃত্যু হয় বলে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার পার্থ প্রতিম দেবনাথ জানান।
ঈদের দিনে তিন মৃত্যু
ডেঙ্গুতে ভুগে ঈদের দিনে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। এদিন ঢাকা, রংপুর ও রাজশাহীতে সোমবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেলে নাজমা আক্তার, গেন্ডারিয়ার আজগর আলী হাসপাতালে অভিজিৎ সাহা এবং রাজশাহী মেডিকেলে আবদুল মালেক নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে রবিবার রাতে মারা গেছেন মনিরুল ইসলাম নামে লালমনিরহাটের এক ব্যবসায়ী। রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থীসহ মারা গেছেন আরও তিনজন।
রবিবার বিকালে কুমিল্লার চান্দিনা থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হন নাজমা আক্তার। সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে তার মৃত্যু হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে জানান, স্বজনরা লাশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এদিকে সোমবার ভোরে রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে চিৎিসাধীন অবস্থায় অভিজিৎ সাহা নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়। অভিজিৎ সাহা নারায়ণগঞ্জের আমলাপাড়ার মন্টু সাহার ছেলে। সে চাষাঢ়ায় মাউন্টেন স্কুলের শিক্ষার্থী।
অভিজিতের মামাতো ভাই অজয় সাহা জানান, অভিজিৎ গত সোমবার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। বমির সঙ্গে রক্ত যেত তার। শুরুতে তাকে নারায়ণগঞ্জে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে গেন্ডারিয়ার আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ জানান, এ জেলায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবদুল মালেক নামের এক ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালটিতে এই প্রথম কোনো ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হলো।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ঢাকায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন আবদুল মালেক। ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফিরে সোমবার ভোর পাঁচটার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে তার মৃত্যু হয়।
আবদুল মালেক চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার বহরম হাউসনগর মহল্লার গোলাম নবীর ছেলে। তিনি ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন।
ঈদের আগের দিন আরও তিনজন
ঈদের আগের দিন রবিবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রসহ আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মো. রিফাত হোসেন ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। রবিবার বিকাল সাড়ে ৩টার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মো. জোবায়ের আলম জানান।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু ধরা পড়ায় রিফাত তার গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের একটি ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছিলেন। অবস্থার অবনতি হলে দুই দিন আগে তাকে অ্যাপোলো হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প থেকে চেষ্টা করছি, এখন যতটুকু তাদের সাহায্য করা যায়। এর আগে গত ২৬ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের ছাত্র ফিরোজ কবির ডেঙ্গুতে ভুগে মারা যান।
রবিবার ডেঙ্গুতে মৃত্যুর অন্য ঘটনা দুটো ঘটেছে ময়মনসিংহ ও নোয়াখালীতে। নোয়াখালীর সদর হাসপাতালে ভোর সোয়া ৬টার দিকে আমির হোসেন (৬০) নামে একজনের মৃত্যু হয় বলে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম জানান।
আমিরের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার দত্তপাড়া এলাকায়। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তিনি চাকরি করতেন। ঢাকায় থাকা অবস্থায় এক সপ্তাহ আগে ডেঙ্গু ধরা পড়লে তিনি গ্রামের বাড়িতে চলে যান বলে জানান ডা. মহিউদ্দিন।
বাড়ি যাওয়ার পর অবস্থার অবনতি হলে শনিবার আমিরকে পাশের জেলা নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনরা। তখন তার জ্বরের সঙ্গে পেটব্যথা ও ডায়রিয়া ছিল। শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে শনিবার রাত ১টার দিকে আমিরকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
জেলার সিভিল সার্জন মো. মোমিনুর রহমান জানান, শনিবার পর্যন্ত নোয়াখালীতে মোট ২৪১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পেয়েছেন তারা। তাদের মধ্যে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৬৬ জন। কেবল নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালেই ৫০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার বেলা ১১টার দিকে ফরহাদ হোসেন নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। ফরহাদ কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার বড়বাড়ি গ্রামের ফেরদৌস আলীর ছেলে। তিনি ইটনা ডিগ্রি কলেজের ছাত্র ছিলেন।
হাসপাতালের উপ-পরিচালক লক্ষ্মী নারায়ণ মজুমদার বলেন, ‘ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ফরহাদ শুক্রবার রাতে হাসপাতোলে ভর্তি হন। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ অকার্যকর হয়ে যাওয়ায় দ্রুত তার মৃত্যু হয়।’
ময়মনসিংহ মেডিকেলে বর্তমানে ২০১ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় ৭১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন এবং ৭৭ জন ডেঙ্গু রোগী সুস্থ্ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।