বেহুলা সেই সাথেই তার স্বামীর মৃতদেহে জীবন ফিরে আসতে শুরু করে

0

এস.এম আব্দুর রাজ্জাক

টাংগাইলের ধনবাড়ীতে আনন্দ বিনোদন দেওয়ার জন্য প্রাচীন বাংলার সুবিখ্যাত বেহুলা লক্ষিনন্দর নাট্যরুপে নিমার্ন করেছে ধনবাড়ীর মো: নুরুল ইসলাম নুরুল দল।
যে কোন প্রয়োজনে আপনারা যোগাযোগ করুন 01619396649
বেহুলা প্রাচীন বাংলার সুবিখ্যাত মঙ্গলকাব্য মনসামঙ্গলের প্রধান চরিত্র, চাঁদ সওদাগরের একজন অন্যতম হলেন পুত্র লখিন্দরের স্ত্রী।

চাঁদ সওদাগরের পুত্র লখিন্দর ও তার ব্যবসায়ীক সতীর্থ সাহার কন্যা বেহুলার জন্ম হয় সমসাময়ীক কালে। দুটি শিশুই একসাথে বেড়ে ওঠে এবং একে অপরের জন্য সম্পুর্ণ উপযুক্ত বলে গণ্য হয়। লখিন্দরের পিতা চন্দ্রবণিক বা চাঁদ সওদাগর ছিলেন হিন্দু দেবতা শিবের একনিষ্ঠ পূজারী। তাই তিনি অন্য কোন দেবতার আরাধনা করতেন না। অপরদিকে শিবের কন্যা মনসা ছিলেন সর্পদেবী, কিন্তু তিনি কোথাও পূজিতা হতেন না। তাঁর পিতা শিব তাঁকে বলেন যে যদি কোন ভক্তিমান শৈব (শিবের উপাসক) প্রথম মনসার পূজা করেন তাহলেই মর্ত্যে তাঁর পূজার প্রচলন সম্ভব। তখন মনসা চাঁদ সওদাগর কে নির্বাচন করে তাঁকেই অনুরোধ করেন মনসা পূজার আয়োজন করার জন্য, কিন্তু শিবের উপাসক চাঁদ সওদাগর মনসার প্রস্তাবে অস্বীকৃত হন। তখন ক্রোধোন্মত্ত মনসা তাঁকে শাপ দেন যে তাঁর প্রত্যেক পুত্রের জীবন তিনি বিনাশ করবেন। মনসার শাপে এইভাবে একে একে লখিন্দর ব্যতীত চাঁদ সওদাগরের সকল পুত্রই সর্পদংশনে নিহত হয়। তাই লখিন্দরের বিবাহের সময় চাঁদ সওদাগর অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে দেবতা বিশ্বকর্মার সাহায্যে এমন বাসর ঘর তৈরি করেন যা সাপের পক্ষে ছিদ্র করা সম্ভব নয়।[১]

কিন্তু সকল সাবধানতা স্বত্ত্বেও মনসা তার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সমর্থ হয়। তার পাঠানো একটি সাপ লখিন্দরকে হত্যা করে। প্রচলিত প্রথা অনুসারে যারা সাপের দংশনে নিহত হত তাদের সত্‌কার প্রচলিত পদ্ধতিতে না করে তাদের মৃতদেহ ভেলায় করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হত এ আশায় যে ব্যক্তিটি হয়ত কোন অলৌকিক পদ্ধতিতে ফিরে আসবে। বেহুলা সবার বাঁধা অগ্রাহ্য করে তার মৃত স্বামীর সাথে ভেলায় চড়ে বসে। তারা ছয় মাস ধরে যাত্রা করে এবং গ্রামের পর গ্রাম পাড়ি দিতে থাকে। এই অবস্থায় মৃতদেহ পঁচে যেতে শুরু করে এবং গ্রামবাসীরা তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন মনে করতে থাকে। বেহুলা মনসার কাছে প্রার্থনা অব্যাহত রাখে। তবে মনসা ভেলাটিকেই কেবল ভাসিয়ে রাখতে সাহায্য করে।[১]

বেহুলার বাসর ঘর
একসময় ভেলাটি মনসার পালক মাতা নিতার কাছে আসে। তিনি নদীতীরে ধোপার কাজ করার সময় ভেলাটি ভূমি স্পর্শ করে। তিনি মনসার কাছে বেহুলার নিরবচ্ছিন্ন প্রার্থনা দেখে বেহুলাকে তার কাছে নিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তার ঐশ্বরিক ক্ষমতাবলে চোখের পলকে বেহুলা ও মৃত লখিন্দরকে স্বর্গে পৌছে দেন। মনসা বলেন, তুমি তাকে (লখিন্দর) ফিরে পাবার যোগ্য, কিন্তু এটি কেবলি সম্ভব হবে যদি তুমি তোমার শ্বশুড়কে আবার আমার পূজারী করতে পার।[১]

“আমি পারব,” বেহুলা জবাব দেয় এবং সেই সাথেই তার স্বামীর মৃতদেহে জীবন ফিরে আসতে শুরু করে। তার ক্ষয়ে যাওয়া মাংস ফিরে আসে এবং লখিন্দর তার চোখ মেলে তাকায়। এরপর লখিন্দর বেহুলার দিকে তাকিয়ে হাসে।[১]

তাদের পথপ্রদর্শক নিতাকে নিয়ে তারা পৃথিবীতে ফিরে আসে। বেহুলা তার শ্বাশুড়ির সহযোগীতায় চাঁদ সওদাগরকে মনসার উপাসনা করতে সম্মত করেন।

Leave A Reply