বরগুনায় অবৈধ অর্ধশতাধিক ইটের ভাটা ও হুমকির মুখে ফসলিজমি 

0
মো.মিজানুর রহমান নাদিম,বরগুনা  প্রতিনিধি:
বরগুনা জেলায় ছয়টি উপজেলা বরগুনা সদর,বামনা, বেতাগী, পাথরঘাটা আমতলী ও তালতলীর প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ধানক্ষেতে অর্ধশত অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠছে। আইনের তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন এলাকার ধানক্ষেতে এসব ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। এমনকি ভাটা মালিকরা অবৈধ ড্রেজার দিয়ে নদী রক্ষাবাঁধের মাটি দেদারছে কেটে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠছে। এতে করে ফসলিজমি ও নদী রক্ষাবাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরের সাথে আঁতাত করেই ইটভাটার মালিকরা অবৈধভাবে ইটভাটা নির্মাণ করেছেন এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।বরগুনা জেলা প্রশাসক দফতর সূত্রে জানা গেছে, বরগুনা জেলায় ৪০টি বৈধ ইটভাটা রয়েছে।
দেখা গেছে বরগুনা-আমতলী-কুয়াকাটা মহাসড়কের সেকান্দারখালী এলাকায় এসইউএবি, এমএসবি, কেএবি, জিমিসহ ইটভাটা ধানক্ষেতের মধ্যে চুল্লি নির্মাণ করে মাটি কেটে ইট তৈরি করছে। আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের বাদুরায় ধানক্ষেতের পাশে ডিবিএম ঝিকঝাক ইটভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। চাওড়া তালুকদার বাজার ও চালিতাবুনিয়া পাতাকাটা সড়কের পাশে এইচবিএম ড্রাম চিমনি ইটভাটাটি ধানক্ষেতে অবস্থিত। অবৈধভাবে ইট পোড়ানোর কারণে ক্ষেতে তেমন ধান হয়নি। ইট পোড়ানোর জন্য কাঠ স্তূপ করে রেখে দিয়েছে। পাথরঘাটার বাইনচটকির আরএসডি ব্রিক্সের মালিক আবদুর রাজ্জাক কিচলু অবৈধ ড্রেজার দিয়ে তার ইটভাটায় নদী রক্ষাবাঁধের ভেতর ও বাইর থেকে মাটি কাটছেন। তিনি সরকারি কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না। তার এ রকম অবৈধ ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলন করায় এলাকার পরিবেশ ও নদী রক্ষাবাঁধটি হুমকির মুখে রয়েছে।
কৃষিজমি ও পরিবেশ রক্ষায় ফসলিজমিতে ইটভাটা না গড়ার আইন থাকলেও অবৈধ ইটভাটা মালিকরা তা মানছেন না। বরগুনার বিভিন্ন এলাকায় ফসলিজমিতে পরিবেশ অধিদফতর, কৃষি অফিসের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স ছাড়া ২৭ টি ঝিকঝাক, ড্রাম চিমনি (ব্যারেল) ও পাঁজা ইট পোড়ানোর কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। স্বল্প উচ্চতার ড্রাম চিমনি ১২০ ফুট উচ্চতার স্থায়ী চিমনির ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। জ্বালানি হিসেবে অনেক ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ ব্যবহারের জন্য গ্রাম থেকে বিভিন্ন জাতের গাছ কেটে এনে ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে। এতে পরিবেশ বিপর্যয়সহ জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক হুমকির আশঙ্কা করেছেন পরিবেশবিদরা। কৃষিজমিতে ইটভাটা নির্মাণ করায় ফসল নষ্ট হচ্ছে। দিনে  দিনে কমে যাচ্ছে ফসলিজমি।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩-এর ৮ ধারা অনুযায়ী কৃষিজমি ও আবাসিক এলাকায় ভাটা স্থাপন দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর কর্তৃক নির্মিত উপজেলা, ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক থেকে কম পে    আধা কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করাও নিষিদ্ধ। যদি কোনো ব্যক্তি ধারা ৮-এর উপধারা (১)-এর বিধান লঙ্ঘন করে নিষিদ্ধ এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করেন তাহলে তিনি অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ইটভাটার মালিকরা এ আইনের প্রতি সম্মান না দেখিয়ে কৃষিজমি, অবৈধ ড্রেজার দিয়ে মাটি কেটে উত্তোলন করা, লোকালয় ও সড়কের পাশে ইটভাটা নির্মাণ করছে। প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরের লোকজন দেখেও না দেখার অভিনয় করছেন।
বাইনচটকির আবদুর রশিদ জানান, পাথরঘাটার বাইনচটকির আরএসডি ব্রিক্সের মালিক আবদুর রাজ্জাক কিচলু অবৈধ ড্রেজার দিয়ে তার ইটভাটায় নদী রক্ষাবাঁধ ভেতর ও বাইর থেকে মাটি কাটছেন। তিনি সরকারি কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না। এতে এলাকার নদী রক্ষাবাঁধ ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। পাতাকাটা গ্রামের কৃষক মো: ফিরোজ ও মো: শহীদ মিয়া জানান, ইট ভাটার কারণে ক্ষেতে তেমন ধান হয়নি। ফসল রক্ষায় দ্রুত ইটভাটাটি সরানোর দাবি জানাই। আবদুল বারেক ও কড়ইবুনিয়া গ্রামের রাকিব জানান, কৃষিজমিতে ইটভাটা নির্মাণ করায় যেমন ফসলিজমি নষ্ট হচ্ছে তেমনি পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। তিনি আরো জানান, এর প্রভাবে অনেক গাছপালা মরে যাচ্ছে।আমতলীর চাওড়া পাতাকাটা এইচবিএম ড্রাম চিমনি ইটভাটার মালিক মো: লুৎফুর রহমান খান জানান, গত বছর পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র দিয়ে এ বছর কাজ শুরু করেছি। পরিবেশ অধিদফতর কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে এ বছরের জন্য ছাড়পত্র দেবে। ধানক্ষেতের মধ্যে ইটভাটায় কিভাবে পরিবশে অধিদফতর ছাড়পত্র দেয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি ছাড়া কেউ ইটভাটা নির্মাণ করতে পারে?
পরিবেশ অধিদফতর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক আবদুল হালিম বলেন, বরগুনার জেলার বিভিন্ন এলাকার অনেক ইটভাটা পরিবেশ অধিদফতরে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেনি। সেখানে বেশির ভাগ ইটভাটার পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেই। যাদের ছাড়পত্র নেই তাদের নোটিশ দিয়েছি। পরিবেশ অধিদফতরের নীতিমালা লঙ্ঘন করে কেউ ইটভাটা নির্মাণ করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, কিছুদিন পরে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক মো: কবির মাহমুদ  বলেন, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে অনেক ইটভাটার বিরুদ্ধে অর্থদণ্ড করা হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই জোরালো ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।
Leave A Reply